Advertisement


মহেশখালীর কালারমার ছড়ায় ফুটবলে ফিরছে প্রাণ, মাঠে গড়াচ্ছে ঘরোয়া ফুটবলের বড় আসর


সংবাদদাতা।। দীর্ঘদিন ধরে ফুটবল ছিল ক্রিকেটের আড়ালে। তবে দেশের সাম্প্রতিক পটপরিবর্তনের পর আবারও আলোচনায় এসেছে ফুটবল। কক্সবাজারের মহেশখালীর কালারমার ছড়া মাঠে ফিরছে সেই পুরনো উন্মাদনা। ক্রিকেটের প্রাধান্যকে পেছনে ফেলে হাজারো ক্রীড়াপ্রেমী এখন মনোযোগ দিচ্ছেন ফুটবলের দিকে।

প্রতিদিন বিকেল হলে শিশু থেকে শুরু করে উঠতি বয়সী যুবকদের ফুটবল অনুশীলনে মুখরিত হয়ে ওঠে কালারমারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ। অনুশীলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় খেলোয়াড়রা।

জাতীয় পর্যায়ে খেলা স্থানীয় ফুটবলার নুরুল হক মেহেদীসহ ফুটবলপ্রেমীরা বলেন, দীর্ঘ বিরতির পর ফুটবলের বড় আসর বসতে যাচ্ছে- এ খবর শুনে ঈদের আনন্দ লাগছে। কারণ খেলাধুলা হলে সমাজে মাদক ও অপরাধ কমে, তরুণ সমাজ সঠিক পথে এগোয়। সেই সঙ্গে কালারমারছড়া বাজারও অতীতের মতো জমজমাট হবে বলে আশা করছি। এ মাঠে অতীতে ৫ থেকে ১০ হাজার দর্শকের সমাগম ঘটেছে।

দীর্ঘ দেড় যুগ পর দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালীর কালারমারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠকে ঘিরে ক্রীড়াপ্রেমীদের অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। মহেশখালী অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি ও কক্সবাজার উপকূলীয় সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হোবাইব সজীবের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং কালারমার ছড়া খেলোয়াড় সমিতির ব্যবস্থাপনায় শুরু হচ্ছে দ্বীপের শীর্ষ ফুটবল আসর। এই সমিতি থেকে প্রতিবছর শতাধিক তারকা মানের ফুটবলার জন্ম নেয়।

গণঅভ্যুত্থানের পর স্থানীয় খেলোয়াড়দের অনুশীলন শুরুর মধ্য দিয়ে প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে ফুটবল। ফুটবল আসরকে কেন্দ্র করে খেলোয়াড় ও সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে।

সাবেক ফুটবলার লিয়াকত আলী প্রিন্স বলেন, এ টুর্নামেন্টকে ঘিরে কালারমার ছড়া ও আশপাশের ইউনিয়নগুলোতে বিশেষ আমেজ সৃষ্টি হয়েছে।

মহেশখালী ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুল আলম রনি বলেন, শৈশব থেকেই ফুটবল আমার রক্তে মিশে আছে। ফুটবল জনগণের খেলা- উদ্বোধনের মাহেন্দ্রক্ষণটির অপেক্ষায় আছি।

কালারমারছড়া ট্রফির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল করিম হিরণ ও অর্থ সম্পাদক দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী বলেন, হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এ ফুটবল টুর্নামেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সাবেক ছাত্রনেতা ও শহীদ তানভীর ছিদ্দিকী স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মাতাব্বর জানান, অতীতে এই মাঠে এমপি ট্রফিতে ৫ ভরি ওজনের স্বর্ণ দেওয়ার নজির রয়েছে। সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতেই এ টুর্নামেন্ট আয়োজন করছি।

টুর্নামেন্ট পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলী আকবর বলেন, আয়োজন প্রায় শেষ পর্যায়ে- আগামী শনিবার উদ্বোধনের লক্ষ্যে কাজ চলছে।

কালারমার ছড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব এখলাছুর রহমান চৌধুরী বলেন, এই আয়োজন কালারমারছড়ার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।

পৃষ্ঠপোষক সংবাদকর্মী ও সমাজসেবক হোবাইব সজীব বলেন, দলমত নির্বিশেষে সবার সহযোগিতায় দেড় যুগ পর কালারমারছড়া মাঠে বসছে ফুটবলের বৃহত্তম আসর। মানুষের মধ্যে এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের খেলোয়াড় ও কালারমারছড়ার সন্তান তৌহিদুল আলম সবুজ বলেন, ফুটবল আমার আবেগ, আমার ভালোবাসা, আমার সব। অতীতে এই মাঠের টুর্নামেন্টে খেলে আমি যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছি, তা এখনো ধরে রেখেছি।

কালারমার ছড়ার সন্তান, ইউনুছখালী নাছির উদ্দীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বলেন, এ মহৎ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

মহেশখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, কালারমারছড়া মাঠ থেকে উঠে আসা অনেক খেলোয়াড় জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছে। আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ।

মহেশখালী থানার ওসি মোহাম্মদ মঞ্জুল হক বলেন, খেলাধুলা যুবসমাজকে অপরাধ থেকে দূরে রাখে। এ টুর্নামেন্ট এ অঞ্চলের জন্য মাইলফলক হবে।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ বলেন, খেলাধুলা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই আয়োজন প্রশংসার দাবিদার।

মহেশখালীর সন্তান উপসচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, এ উদ্যোগ ক্রীড়ামোদিদের অনুপ্রাণিত করবে এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে ফুটবলের প্রতি প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি করবে। কালারমারছড়া ফুটবলের উর্বরভূমি, যেখানে খেলাটিকে জীবিত রাখা সম্ভব হয়েছে।