Advertisement


বুকে যাঁর সাহারার হাহাকার

মুহাম্মাদ আমানুল্লাহ


'অথচ নীরবতা'র কবি অরুণ সেন আর আমাদের মাঝে নেই- তিনি চিরনীরবতার ভুবনের বাসিন্দা এখন। তাঁর প্রয়াণের পর থেকে আমাদের হৎপি- জ্যান্ত দ্বিখ-িত কই মাছের মতো বুকের ভেতর সারাদিন লাফিয়ে চলছে। যখন যেখানে যাই কবি অরুণ সেন যেন ছায়ার মতো ছুটছেন আমাদের পেছনে পেছনে। এখন কোথায় নেই কবি- চেরাগীর মোড়ে, বাতিঘরে না সবুজের আড্ডায়! কী এক মায়ার বাঁধনে আটকে গেলাম আমরা; তাঁর জন্যে খোলা শোকবইয়ের পাতায় পাতায় হৃদয়ক্ষরণের শত আর্তস্বর আমাদের বার বার আনমনা করে তুলছে।
কবি অরুণ সেন আশির দশকের কবি। চট্টগ্রামের বোয়ালখালি উপজেলার ধলঘাট গ্রামে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। 'ঋতপত্র' তার সম্পাদিত ছোটকাগজ। তাঁর নয়টি কবিতার বই ও দুটো ছড়ার বই আছে। কবির সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ 'অথচ নীরবতা' ২০১৪ সালে খড়িমাটি থেকে প্রকাশিত হয়। কবিতা বিষয়ক মুখপত্র ঋতপত্রের মোট ষোলটি সংখ্যা তিনি বের করেছেন। এর সর্বশেষ সংখ্যা এ বছর জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়েছে।
কবির শখ ছিলো সিএ পড়বেন কিন্তু কাব্যলক্ষ্মীর ভালোবাসার টানে ওটা আর হয়ে ওঠেনি। তাঁদের পৈতৃক ব্যবসায়ও ভালোভাবে মন বসাতে পারেননি। একবার জড়িয়ে পড়েছিলেন পরিবহণ ব্যবসায়- না, তাও তাঁর হয়ে ওঠেনি। তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন লিখতে আর পড়তে। নিজের শ্রম ও মেধা দিয়ে সম্পাদনা করেছেন প্রিয় ছোটকাগজ 'ঋতপত্র'।
কবি অরুণ সেন বাংলা ভাষার কবি, বাংলাদেশের কবি, আমাদের কবি। তাঁর নাম শুনলেই একজন আপাদমস্তক কবির ছবি আমাদের চোখে ভেসে ওঠে। রাতুল ঠোঁটের এই কবি মাথায় ক্যাপ পরতেন, পান খেতে ভালোবাসতেন। শেষ বয়সে প্রচুর কথা বলতে পছন্দ করতেন, তিনি ছিলেন একজন কথা বলা কবি। তিনি যখন কথা বলতেন আমরা চুপচাপ শুনে যেতাম। আর অন্যদেরকে নীররে শুনে যেতে অনুরোধ করতেন। কারণ আমরা জানতাম- তিনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন আর 'জগতসংসার ভুলে থাকা হৃদরোগ বয়ে বোড়ানো মানুষ'। কয়েক বছর আগেই প্রথম হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন তিনি। চিকিৎসার পর প্রায় সুস্থ হয়ে উঠলেও জগৎ সংসারে আর মন বসাতে পারেন নি। এক ধরনের অস্থিরতার বিবমিষা তাঁকে পেয়ে বসেছিল। তিনি কবিতা অনুরাগীদের পরম ভালোবাসতেন; আর একটার পর একটা কবিতা শোনাতেন। তাঁর গানের গলাও ছিল বেশ, দরাজ গলায় গান ধরলে সুরের ছোঁয়ায় শ্রোতারা সহজে আচ্ছন্ন হয়ে পড়তেন।
(২)
অরুণ সেনের কবিতার বিষয়আশয় বিচিত্র- সমাজ সংসারের নানাবিধ প্রসঙ্গে তিনি কবিতা লিখেছেন। প্রায় তিন দশক ধরে আমৃত্যু তিনি কবিতার পেছনে ছুটে চলেছেন। তাঁর কবিতায় উঠে আসে হৃদয়ের গভীরে উথাল-পাতাল করা সংক্ষোভ ও দ্রোহ। সমকালীন সময়ের যে বৈষম্য তিনি তাঁর প্রথম কাব্য গ্রন্থ 'শঙ্কায় নিনাদে শঙ্খ' কাব্যগ্রন্থে এঁকেছেন, সেই ছবি সেই সুর যেন বহুমাত্রিকভাবে শেষ কাব্যগ্রন্থ 'অথচ নীরবতা'য়ও সমুপস্থিত। কবি দেখতে পেয়েছেন সমাজের বৈষম্য-অনাচার যেমন বদলায়নি ঠিক তেমনি আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের শত্রুরা দিন দিন নানাভাবে শক্তিশালী হয়েছে। মানবিক বিকাশের পথকে তারা রুদ্ধ করে রেখেছে হাজারও অপকৌশলে। যে 'এক চিলতে সংকট' দিয়ে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন তা পরবর্তীতে পরিণত হয়েছে বিশাল মহীরূহে-
'এক চিলতে সংকট উড়ে এসে জুড়ে বসে
আবহাওয়ার হৃৎপি-ের ধারে
ভয়ে গেছে দায়
উড়ে উড়ে শেষহীন নীলিমায়।' - এক চিলতে সংকট/ শঙ্কায় নিনাদে শঙ্খ'।
তাঁর কবিতার বইগুলো সমুখে খুলে বসলে আমরা একজন পরিপাটি-পরিণত মনষ্ক কবির অবয়ব দেখতে পাই। অরুণ সেন তাঁর কবিতার ওজনের কারণে জীবদ্দশায় সাহিত্য সমালোচক ও বোদ্ধা পাঠকের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে পেরেছিলেন। অধ্যাপক মনিরুজ্জামান রচিত 'সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে চট্টগ্রাম' গ্রন্থের বরাত দিয়ে বলা যায় তিনি ঢাকা চট্টগ্রামের পাশাপাশি ওপার বাংলায়ও একটি পাঠক শ্রেণি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। যা একজন মফস্বলে বসবাসকারী কবির পক্ষে যথেষ্ট শ্রমসাপেক্ষ বিষয়।
তিনি কবিতাচর্চার শুরুতে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন আমাদের চেতনার সংকট ও মূল্যবোধের অবক্ষয় কীভাবে ঘুণ পোকার মতো বাঙালিসমাজকে খেতে বসেছে। তিনি মিথ্যেকে সত্যের লেবাস হতে দূরীভূত হতে এবং আলোর নাওয়ে আমাদেরকে আরোহণ করার আহবান জানিয়েছেন।
'আমাদের সাথে আছে পাল তোলা নাও/ শঙ্কায় নিনাদে শঙ্খ/ মিথ্যেরা মিথ্যে হয়ে যাও।'
- তাঁর দেখা এই মিথ্যাচার আজও আমাদের সমাজ সংসার রাজনীতি থেকে অপসৃত হয়নি।
কবি অরুণ সেন প্রেম-অপ্রেম-মায়া-মৃত্যু-সংসার-প্রকৃতি প্রভৃতি বিষয় নিয়ে একটির পর একটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি নিজেকে পূজারী বলে অভিহিত করেছেন, পুড়তে চেয়েছেন আবার অমরত্বের প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেছেন। তাঁর এই প্রত্যাশার মাঝে এক ধরনের ঈশ্বরীয় আস্তিক্যও ফুটে উঠেছে। 'আমি তো ফুটেই আছি আজীবন ফোটার তাগিদে/ ফুল হয়ে কেন মিছে ফুটতে যাবো অযথা ওপারে/ এ আমি পূজারী মাত্র চাই শুধু একটু অমরত্ব/ মনে রেখো আমার এ প্রাণবায়ু তোমার শিখায়/ মধুর পিপাসা তুমি যত পারো আমাকে জ্বালাও/ আমাকে বাঁচিয়ে রাখো ধুঁকে ধুঁকে আমাকে পোড়াও।' - আমাকে পোড়াও / বাইরে রেখে পা।
পৃথিবীর তাবৎ শিল্পীর মতো কবি নিজেও ছিলেন একজন নিঃসঙ্গ নায়ক। নৈঃসঙ্গ্যের নয়নতারা কী এক আশ্চর্য মুন্সিয়ানায় ফুটে ওঠে তাঁর কবিতার পংক্তিতে পংক্তিতে। তিনি অনেকের সাথে থেকেও যেন বার বার একা হয়ে যান। তিনি বহমান নদী আর সাগরের কাছে, ফুলের কাছে একা একা ছুটে যান। 'শেষ বিকেলের কড়ানাড়া'য় এই নিঃসঙ্গতা যেন আলাদা মাত্রায় দ্যোতিত হয়- তিনি পৃথিবীর সকল সম্পর্কের সুতো ছিঁড়ে একা একা শুয়ে থাকেন।
১. 'শুয়ে আছি একা/ পর্যটনে নিজের ভেতরে/ অনেকের সাথে থেকে একা/ যেতে হয় পাথরের কাছে/ দুঃখ আর অভিমানে গড়া/ তাদের সুখের কথা শুনতে হয় একা।'- সুতো ছিড়ে শুয়ে আছি, শেষ বিকেলের কড়ানাড়া।
২. 'সকলের সাথে থাকা একা একা তিনি/ অনেকের চেয়ে/ চোখে একটু বেশি দেখতে পান / এটা নাকি তাঁর একটা মস্ত অপরাধ। - কবি হুমায়ুন আজাদ, কে মানুষ পলাতক বুকে কাঁদে।
অরুণ সেনের কবিতা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের আবরণে বেদনার সমাহার, যেন যন্ত্রণাদগ্ধ হৃদয়ের হাহাকার। তাঁর কবিতায় উপমা চিত্রকল্পের কুশলী প্রয়োগের পাশাপাশি মেকি বাস্তবতার সরস উপস্থাপন অতি মাত্রায় চোখে পড়ে। কবি একজন ঋষির মতন জ্ঞানে ও কর্মে শুভ্রতা ও স্বচ্ছতা কামনা করেছিলেন।
'অমাবশ্যার সম্মুখে শিকারের মত ঝুলে আছে উপোসি পূর্ণিমা।'- ঝুলে আছে উপোসি পূর্ণিমা, ভালো আছো সোনালু ফুল।
'অসহায় হাশেম কাকা/ ভালো আছে সোনালু ফুল/ পড়েছে কি এখন ধরা/ লুকানো সে-আসল ভুল।' - ভালো আছো সোনালু ফুল।
'বুকে তার মুকুন্দরামের হাট' কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো বেশ স্মৃতিগন্ধি; এক ধরনের নস্টালজিক আচ্ছন্নতায় আমাদের বুঁদ করে রাখে। এই ক্ষণকালের দুনিয়ায় আমরা মায়ার বাঁধনে আটকে যাই। অনেক সময় আপন আপনের পর হই, পর আবার আপন হয় অকারণে অনায়াশে। মায়পথ আসলেই রহস্যময় এক আলো অাঁধারে ঘেরা।
১. 'কবিতার খাতা খুলে কত বার ডেকেছি তাদের/ আসি, আসি বলে শুধু দূর থেকে নৈকট্য ছড়ায়/ অদৃশ্য পাখির ঠোঁটে যৎসামান্য কিছু/ ফুলেল আগুন দিয়ে পালায় পালায়।' - নিয়তির বাঘ স্যার আমাকে ডরায়/ বুকে তার মুকুন্দরামের হাট।
২. 'ও মিষ্টি মেয়ের দল, তোমরা কি এখনো/ ঠিক ওভাবেই যাও কানুনগোপাড়া/ স্যার আশুতোষ কলেজের দিকে/ এখনো কি তোমরা ঠিক আগেরই মতন/ দূর থেকে রচে যাও গোপন নিকট।' - বুকে তার মুকুন্দরামের হাট, বুকে তার মুকুন্দরামের হাট।
অতৃপ্তিবোধ যে কোন জাত শিল্পীর একটি সহজাত প্রবণতা। কবিতা ও সংসারের প্রতি এক ধরনের না হওয়ার বেদনাবোধ তাঁকে মহান শিল্পীতে পরিণত করেছিল। তাঁর এই বস্তুগত জীবনের অপূর্ণতাবোধ তাঁকে কবি জীবনে এনে দেয় এক ধরনের স্নিগ্ধ মায়াময় পেলবতা। কবির পলাতক বুকে তিনি নিরন্তর যেন এক কান্নাকে শুনতে পেতেন। এই কান্না আর কিছুই না, শুধু অতৃপ্তির শৈল্পিক বেদনাবোধ মাত্র।
'ঘৃণার অযোগ্য বলে রুক্ষ করুণায়/ মরণ ছোঁয় না এত যন্ত্রণা বৃথাই/ কে কাঁদে কে কাঁদে হায় পলাতক বুকে/ জ্বলনের কষ্টে নাকি ক্লেদ যাবে চুকে।'- কে কাঁদে কে কাঁদে/ কে মানুষ পলাতক বুকে কাঁদে।
কবি অরুণ সেনের কোন কোনো কবিতায় কিছু কিছু দার্শনিক জিজ্ঞাসা, তীব্র প্রশ্নময়তা ও অপার রহস্যময়তা চোখে পড়ে। জীবন কোথায় যায়? আপন কেন আপনের পর? অথবা মানুষ কেন মানুষকে খেয়ে হজম করে ফেলে অবলীলায়- এই প্রশ্নমালা তিনি আমাদের কাছে ছুঁড়ে দিয়েছেন। আমরা তাঁর 'অনেক ভুলের প্রতিবেশী' কাব্যগ্রন্থে এ রকম অনেক প্রশ্নের ছড়াছড়ি লক্ষ্য করি।
১. 'এ বাড়ি আমার, ও বাড়িটা কার?/ দু'বাড়ির মাঝে উঠোনের মতো/ যে পথ রয়েছে সেই পথ দিয়ে/ জীবন কোথায় যায়? - পথ-খরচা/ 'অনেক ভুলের প্রতিবেশী'।
২. মানুষ মানুষ খেয়ে হজমের পরও কিন্তু/ জীবিত রেখে দিচ্ছে ভোজনের অন্য এক রূপ/ পাথরের কান্নাতেই হৃদয় পাথর। - ভোজনের অন্য এক রূপ/ 'অনেক ভুলের প্রতিবেশী'।
আধুনিক বাংলা কবিতায় মায়াবৃক্ষের চাষবাসে কবি অরুণ সেন তাঁর কুশলীপ্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। জগৎ সংসারের এই পথে এক ধরনের অনিকেত জীবনবোধই ছিল তাঁর চিরসঙ্গী। তিনি মায়ার বন্ধনে আর মায়াহীনতায় মাঝে যুগপৎভাবে এক অনিবার্য ফাঁকিকে খুঁজে পেয়েছেন। পৃথিবীর কেউই কারো সাধ্যের সীমানাকে উপলব্ধি করে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
১. 'কিসে বন্ধন, কিসেই বা ছুটি/ এ দুয়ের মাঝে আছে শুধু ফাঁকি/ উড়ন্ত সাধ নেশায় বোঝে না সাধ্যের সীমা তার/ ভুলেরা দেখে না, কোথাকার ভুল, কীভাবে কীভাবে কার।'- মায়া/ অথচ নীরবতা।
'অথচ নীরবতা' কাব্যগ্রন্থের প্রজন্ম চত্বর ও শাহবাগ, শাহবাগ কবিতা দুটো সাম্প্রতিক বাংলাদেশের সংক্ষুব্ধ সময়ের স্মারক হিশেবে চিহ্নিত করা যায় সহজে। গণমানুষের এই জাগরণকে তিনি সমগ্র জাতির একতারে বেজে উঠেছে বলে বিবৃত করেছেন। এই গণদাবী বাস্তবায়নের বিষয়কে তিনি শরীরের ভেতর পুষে রাখা পুরোনো ক্ষতের সাথে তুলনা করেছেন। যার চিকিৎসা ছাড়া জাতীয় জীবনে সুস্থতা একেবারেই অসম্ভব।
১. শরীরে কোথায় পুরোনো রোগের রয়েছে বিশাল ক্ষত/ জাগা জনতায় একযোগে দেয় ফুৎকার অবিরত। প্রজন্ম চত্বর, 'অথচ নীরবতা'।
২. হোক না সেতার, তবুও সে আজ একতাওে বাজে শুধু/ কেন বলো ভাই?/ শাহ বাগ শাহবাগ/ শাহবাগ আজ বাংলাদেশের মুখ। শাহবাগ, শাহবাগ/ 'অথচ নীরবতা'।
কবি অরুণ সেন দুঃখ ও বিষাদময়তাকে একটি আলাদা মাত্রায় উত্তীর্ণ করতে সচেষ্ট ছিলেন। দুঃখ যে একটি মহান শিল্প তা কবির কবিতা পাঠ না করলে সহজে বোঝা যেতো না। একটি দুঃখনদীর বহতা ঢেউ যেন তাঁকে জীবনব্যাপী কবিতার লাইনে লাইনে শব্দে শব্দে প্রতিনিয়ত আন্দোলিত করেছেন। তিনি সরব সবাক দুঃখেরকবি। তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলোতে গ্রন্থিত কবিতায় এ রকম একটি দুঃখকাতর আলোড়ন প্রায়শ দৃশ্যমান।
১. এ নদীর নাম পাগলী বিষাদ/ দৃষ্টিগর্ভে জন্ম হয়েছে যার/ দু'পাশে দাঁড়ানো ব্যাকুল সবুজ/ বুকে বয়ে যায় সাহারার হাহাকার।- বিষাদ না নিষাদ/কে মানুষ পলাতক বুকে কাঁদে।
২. ও দুঃখ তোমার চাবুকের এতো জোর!/ তাই বুঝি বিড়ম্বিত ইচ্ছে কাল প্রশ্ন করেছিল- / নিজেকে আড়াল করে বেদনাকে নিয়ে/ কে রচে হৃদয়পুরে এতো ভালোবাসা?- রহস্য/ 'অথচ নীরবতা'।
বস্তুগত জীবনের প্রতি উন্নাসিকতা ও বিবমিষাবোধ কবিতা রচনায় বিপ্রতীপে তাঁকে এনে দেয় এক আশ্চর্য কুশলতা ও শৃঙ্খলা। কবিতার রূপগত বিষয়ে বলতে গেলে দেখা যায় তিনি টানা গদ্যে যেমন লিখেছেন তেমনি মাত্রাবৃত্ত অক্ষরবৃত্ত স্বরবৃত্তেও কবিতা লিখেছেন প্রচুর। আবার দীর্ঘকবিতা রচনায়ও ছিলেন সমান পারদর্শী। তাঁর শব্দের ব্যবহার আমাদের সচকিত করে তোলে। আমরা তো জানি, আধুনিক বাংলা কবিতায় অক্ষরবৃত্তে রচিত কবিতার চাপ অনেক গুণ বেশি; এক্ষেত্রে তাঁর মাত্রাবৃত্তে রচিত কবিতার সংখ্যা অনেক এবং কবিতাগুলো মুগ্ধ হবার মতো। উপমা উৎপেক্ষা ও চিত্রকল্প সৃজনে তিনি স্বাতন্ত্র্যের স্বাক্ষর রেখেছেন।
কবির আকস্মিক প্রয়াণ আমাদেরকে তীব্রভাবে আলোড়িত করেছে- আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার প্রশান্তি কামনা করি। আশা করছি- কবি অরুণ সেনের কবিতা এখন আরো বহুলমাত্রায় পঠিত হবে, তাঁর কবিতার ভাব ও রূপ নিয়ে সমালোচক-গবেষকগণ নির্মোহ ভাবে কাজ করবেন।

লেখক: 
মুহাম্মাদ আমানুল্লাহ
কবি-গল্পকার: জন্ম:১ আগস্ট ১৯৬৭ সালবাবা মৌলানা মুহাম্মাদ হুসাইন এবং মা মুহসেনা বেগমমৌলানাবাড়ি, জামালপাড়া,হোয়ানক, মহেশখালী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে যথাক্রমে ১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে  নব্বই দশকে কবিতা ও প্রবন্ধ দিয়ে লেখালেখির সূচনামূলত কবি,গল্প ও প্রবন্ধের পাশাপাশি শিশুসাহিত্য রচনায় বিশেষভাবে অনুরক্তজাতীয় দৈনিক প্রথম আলো, সমকাল, ইত্তেফাক, যুগান্তর, সংবাদ, জনকন্ঠ, আলোকিত বাংলাদেশ, করতোয়াসহ চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী, পূর্বকোণ, সুপ্রভাত বাংলাদেশ,পূর্বদেশে বিভিন্ন লেখা প্রকাশিত হয়েছেএ ছাড়া সচিত্র বাংলাদেশ, মাসিক উত্তরাধিকার,মাসিক শব্দঘর, মাসিক নবারুণ, শিশু ও সুন্দরমে লিখে থাকি২০১৪ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে দুটো বই- প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'মায়াবী রোদের ডানা' (শুদ্ধস্বর,ঢাকা) ও 'চড়ুইভাতির লাল টিপ' (শৈলী প্রকাশন-চট্টগ্রাম)২০১৫ সালে বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছে গল্পগ্রন্থ 'অপরাহ্ণের নীল চোখ' ( তৃতীয় চোখ প্রকাশন) তাঁর সর্বশেষ প্রকাশনা কবিতার বই পোড়ামাটির সানাই’- ২০১৬ সালে তৃতীয়চোখ প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে। পেশাগত জীবনে একজন নিবেদিত শিক্ষাসেবী; শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা