Advertisement


আমার চোখে -আমাদের দ্বীপ মহেশখালী!

আরিফ বিন ছালেহ ।।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি ডিজিটাল আইল্যান্ড খ্যাত আমাদের এই মহেশখালী ৷ শত শত গ্রাম নিয়ে গঠিত এই দ্বীপ ৷ প্রায় ৫ লাখ লোকের বসবাস আমাদের এই দ্বীপে। দ্বীপের সুজলা-সুফলার বর্ণনা কবির কণ্ঠের সাথে মিলিয়ে বলতে ইচ্ছে করে ৷
            "আমাদের দ্বীপটা  ছবির মতন
            মাটির তলায় এর ছড়ানো রতন ৷"

আমাদের দ্বীপে বিভিন্ন পেশার লোক বসবাস করে। কেউ সাগরকে সাথে (মাছ ধরে) করেই নিজের জীবন নির্বাহ করে। কেউ লবণের মাঠের সাথে সখ্যতা বজায় রেখে জীবন নির্বাহ করে। কেউ বা মিষ্টি পানের চাষ করে তিন বেলা আহার জোগাড় করে। এই দ্বীপের মানুষ গুলোর ভালোবাসার কমতি ছিল না, সব পেশার লোক একই চাদরে ঢাকা ছিল ৷ একে অন্যের সম্পূরক ছিল ৷ সকল পরিবারের একই স্বপ্ন ছিল ৷ যে স্বপ্ন কবিতায় রূপ দিয়ে বলতে চাইঃ-
" স্বপ্নের সকল প্রজাপতিগুলো উড়ে উড়ে বসতো তাদের কপালে ,
 তারা যৌথ-খামারের স্বপ্ন দেখতো ৷
 অনেক কামরার একটি ঘরে বসবাসের স্বপ্ন দেখতো, 
তাদের রমণীরা বড় হাড়িতে রান্না করতো ৷ 
একসাথে ছপ/পাটি বিছিয়ে রাতের খাবার আহার করতো ৷"

কিন্তু দ্বীপের সেই স্বপ্ন এখন আর কেউ দেখে না ৷ আমাদের অবহেলার কারণে দ্বীপটা আজ অসুন্দর হয়ে পড়েছে ৷ মানুষ  'ইটের পর ইট মাঝে মানুষ কীট, নাইকো ভালোবাসা ,নাইকো মায়া ' এমনি কৃত্রিম সুখের আশায় ভিনদেশীদের সাথে সংসারের স্বপ্ন দেখছে ৷ অথচ কৃষি নির্ভর এই দেশের উন্নয়ন কখন সম্ভব নয় যদি গ্রামের উৎপাদিত ফসলের দাম বা ন্যায্যমূল্য না থাকে ৷ গ্রামের উন্নয়ন মানে দেশের উন্নতি ৷

গ্রামীণ উন্নয়ন বলতে, গ্রামের উৎপাদন বৃদ্ধি, সম্পদের সুষম বণ্টন, ও ক্ষমতায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য এক পরিকল্পিত পরিবর্তনকে বোঝায় ৷
যদি আমরা আমাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাই তাইলে কিভাবে আমার দ্বীপের অর্থনৈতিক চাকাটা সচল থাকবে ?

বর্তমান সরকার যথেষ্ট উন্নয়ন করতেছে, বর্তমান সরকারকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে আখ্যায়িত করা হয় ৷ বর্তমান গ্রামীণ উন্নয়নকে জাতীয় উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে গণ্য করা হয় ৷ তবে আমরা চাই পরিবেশ বান্ধব উন্নয়ন ৷

গ্রামের অতীত ঐতিহ্য এখন আর নেই ৷ গ্রামের আনন্দ -উৎসব, সুখ-শান্তি সব হারিয়ে যাচ্ছে ৷ প্রযুক্তি আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ, প্রযুক্তি আমাদের গ্রামীণ সমাজকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে ৷ তবে কিছু মানুষরূপী কীটদের কারণে গ্রামীণ সমাজ তার লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারতেছে না ৷ প্রযুক্তির এই যুগে বদলে যাচ্ছে মানুষের রুচি, অভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছেদ, আচার-আচরণ, সংস্কৃতি ও সামাজিক কর্মকাণ্ড, পেশাসহ অনেক কিছুই ৷ তবে পাল্টাচ্ছে না কিছু মানুষরূপী হায়েনার চরিত্র ৷ সরকারের উন্নয়নকে আমি সাধুবাদ জানাই, -কারণ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে গ্রাম উন্নয়নের স্পর্শ পাচ্ছে ৷ আগামী শতাব্দীতে শহর আর গ্রামের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে যাবে ৷ আমাদের গ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষা করে উন্নয়ন তখনই সম্ভব যখন আমাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকবে ৷

আমার মতে গ্রামের উন্নয়নের প্রধান অন্তরার হচ্ছেঃ
১৷  অযোগ্য ও দুর্নীতি পরায়ণ নেতৃত্ব 
২৷  কেন্দ্রীয় ভাবে স্থানীয়  সরকারের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে অসহযোগিতা ৷
৩৷ একটা সুবিন্যস্ত গ্রামীণ উন্নয়নের নীতিমালার অভাব ৷ 
৪ ৷ গ্রামীণ প্রকল্প থেকে সুযোগ-সুবিধার অসম বণ্টন ৷
৫৷ নেতাদের স্বজন প্রীতি ও পাতি-নেতার  দৌরাত্ম্য ৷

আমি মনে করি দ্বীপের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কিছু সংখ্যক পাতিনেতা ৷ তাদের কারণে দ্বীপ তার প্রাপ্য হতে বঞ্চিত ৷ তাদের হিংসা-বিদ্বেষ, দালালির কারণে দ্বীপের পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে ৷

জন্মস্থান (গ্রাম)কে স্বর্গ (বেহেশত) এর সাথে তুলনা করা হয় ৷ অথচ বেহেশতে সকল শ্রেণী ও পেশার লোক সহবস্থান করবে ৷ কিন্তু আমরা দ্বীপ নামক স্বর্গে সহবস্থান করতে পারি না ৷ একটি গ্রামে বিভিন্ন পেশা ও বিভিন্ন মতের লোক থাকবে তাই বলে আমি আমার ভাইয়ের ক্ষতি কেন করব ?  দিন শেষে সবাই একই গোয়ালের বাসিন্দা ৷ যদি আমাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা নামক ব্লাড না থাকে, তাইলে আমরা কিভাবে গ্রামের দলা-দলি, হিংসাত্মক ক্যান্সারকে নিয়ন্ত্রণে আনব !

দ্বীপে সহস্র অভাব, দ্বীপ ধ্বংস হয়ে যাবে এই ভেবে গ্রাম ত্যাগ করলেই চলবে না ৷ আমাদের ভিতরের সত্তাকে জাগ্রত করতে হবে এবং গড়তে হবে কলুষমুক্ত দ্বীপ ৷আমরা দ্বীপের উন্নয়ন চাই ,তবে এমন উন্নয়ন নয়, যে উন্নয়নে দ্বীপ বা দ্বীপের মানুষ হুমকির সম্মুখীন হবে ৷ দেশের পঙ্গু অর্থনীতিকে সজীব ও প্রাণবন্ত করে তুলতে হলে গ্রামকে সজীব করে তুলতে হবে ৷ গ্রামই দেশের প্রাণ ৷ গ্রামের প্রাণ হচ্ছে আমাদের অর্থকরী ফসল (মাছ, লবণ, পান ) আমরা যদি আমাদের অর্থকরী ফসলের দাম কমিয়ে দি বা তার ন্যায্য মূল্য না দি তাইলে গ্রাম পঙ্গু হয়ে যাবে ,গ্রাম পঙ্গু হলে দ্বীপ চলতে পারবে না ,দ্বীপ চলতে না পারলে দেশ তার প্রাণ হারাবে ৷

ডা. লুৎফুর রহমান বলেছিলেনঃ-"জাতিকে বড় করতে হলে গ্রামের মানুষকে প্রথমে জাগাতে হবে ৷"
আশা করা যায় অচিরেই সরকার ও সচেতন দ্বীপবাসীর সহযোগিতায় দ্বীপটাকে  আমরা সোনার দ্বীপ হিসাবে দেখতে পাবো ৷ কৃষকরা তাদের সুখ পাখিকে ফিরে পাবে, ঘাম মাখা সেই হাসি আমরা আবার দেখবো৷ তখন অতি আনন্দে আমরা আমাদের নিজ দ্বীপে সবাইকে আমন্ত্রণ করতে পারবো ৷
কবিতার মতো করে বলা যায়ঃ
           -তুমি যাবে ভাই
             যাবে মোর সাথে ,
             আমার ছোট দ্বীপে?


লেখকঃ
আরিফ বিন ছালেহ
শিক্ষার্থীঃ অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ।