মহেশখালীতে
হতে যাওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সম্পর্কে ইতঃপূর্বে নানাজন নানাভাবে মতামত
দিয়েছেন। কোনোটিই এ পর্যন্ত সরকারের কানে পৌঁছেনি। বিষয়টা যেহেতু
মহেশখালীকেন্দ্রীক, তাই মহেশখালীবাসীকেই আগে ভাবতে হবে। চলমান প্রকল্পগুলো
বাস্তবায়িত হলে মহেশখালীর পূর্বেকার চিহ্ন তো উবে যাবেই, একইসাথে জনবসতিও
অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে। এমনকি এরই মধ্যে অম্তিত্ব সংকটে কালারমারছড়া
ইউনিয়নের সোনাপাড়ার বাসিন্দারা। সোনারপাড়া এবং গোদারপাড়া (পাহাড়তলী) এলাকায়
সরকারের স্বঘোষিত বনাঞ্চল মূলত অরক্ষিত বনাঞ্চল প্রায়ই চারশ' ঘরবাড়ি (
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে) উচ্ছেদ করা হয়েছে। এদের মধ্য থেকে কাউকে কাউকে
পুনর্বাসিত করার নামে নির্বাসিত করা হয়েছে, কিছু স্বজনদের বাসায় অবস্থান
করছেন, বাকিরা খোঁয়াড়ে জীবনযাপন করছেন। যেটিকে জোর গলায় প্রচার করা হচ্ছে
"পুনর্বাসন"! এখানেও স্পষ্ট করতে হবে, "পুনর্বাসন" দ্বারা কীভাবে জীবনযাপন
করানো হবে, মানুষ হিসেবে নাকি শুধু পুনর্বাসিত হিসেবে।
পুনর্বাসনের নামে নির্বাসিত এবং আগামীতে আশ্রয়ান প্রকল্পের নামে খোঁয়াড়ে জীবনে পদার্পন করতে যাচ্ছে মহেশখালীবাসী। এটি অমানবিক এবং স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত। এলাকার মানুষের দাবি হচ্ছে, আমাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে কেউ নিশ্চয়তা দিচ্ছে না কেন? এই প্রশ্নের উত্তর আজ পর্যন্ত আমরা কারও কাছ থেকে পাইনি। মহেশখালীর প্রকল্পে মহেশখালীবাসীর জায়গা যাবে কিন্তু তাঁরা উচ্ছেদ হবে কেন? জনগণকে উচ্ছেদ করে, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে যে ধরনের উন্নয়নই হোক না কেনো সেটাকে আর উন্নয়ন বলা যায় না।উচ্ছেদের মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়া উন্নয়ন জনগণ মেনে নিতে অপ্রস্তুত। নইলে সরেজমিনে এসে জরিপ করুন, তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
পুনর্বাসনের নামে নির্বাসিত এবং আগামীতে আশ্রয়ান প্রকল্পের নামে খোঁয়াড়ে জীবনে পদার্পন করতে যাচ্ছে মহেশখালীবাসী। এটি অমানবিক এবং স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত। এলাকার মানুষের দাবি হচ্ছে, আমাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে কেউ নিশ্চয়তা দিচ্ছে না কেন? এই প্রশ্নের উত্তর আজ পর্যন্ত আমরা কারও কাছ থেকে পাইনি। মহেশখালীর প্রকল্পে মহেশখালীবাসীর জায়গা যাবে কিন্তু তাঁরা উচ্ছেদ হবে কেন? জনগণকে উচ্ছেদ করে, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে যে ধরনের উন্নয়নই হোক না কেনো সেটাকে আর উন্নয়ন বলা যায় না।উচ্ছেদের মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়া উন্নয়ন জনগণ মেনে নিতে অপ্রস্তুত। নইলে সরেজমিনে এসে জরিপ করুন, তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
আপরারা যাঁরা বিশ্বাস করছেন না, তাঁরা আসুন, দেখুন আমাদের মহেশখালী। তারপর বিচার করুন_এটি উন্নয়ন নাকি আগ্রাসন। জামাত-শিবির ভয়ে কিছু বলতে পারছে না। এমনি "মহেশখালী জাগ্রত ছাত্রসমাজ"-এর সাথে জামাতের সংশ্লিষ্টতা থাকায় প্রশাসন তাদের মহাসমাবেশ পণ্ড করেছে। সেটি যৌক্তিকও ছিল। কিন্তু যারা রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় কিংবা নিরপেক্ষ অথবা আওয়ামীলীগার তাঁরাও আজ নীরব। অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে কথা বলতে আপত্তি কোথায়? সরকার সরকারের জায়গায় থাক, আমাদেরকে আমাদের জায়গায় থাকতে দিন। প্রশাসনের হয় তো ভয়ে কেউ কিছু বলছে না, এটিই চরম পর্যায়ের সত্যকথা। তাহলে সবাই যদি এভাবে নীরবে, নিভৃতে টাকার লোভে মত্ত হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে মহেশখালীকে সিঙ্গাপুরের আদলে রূপ দিই, তাহলে মহেশখালীবাসী মননে ও চেহারায় উজ্জ্বল্য ফুটে ওঠার কথা। কিন্তু মহেশখালীর মানুষ আজ নির্বিকার, অসহায়, দিশেহারা এবং অশ্রুসিক্ত। কী হচ্ছে এখানে, আমাদেরই বা হবে কী?
আমরা উন্নয়নের বিপক্ষে যাচ্ছি না, অপউন্নয়ন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও উদ্বাস্তুকরণের বিপক্ষে বলছি। যেহারে পাহাড় কাটা শুরু হয়েছে, এ থেকে সহজাত অনুমান করা যায়, মহেশখালীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তো উবে যাচ্ছেই, তাছাড়া আমজনতার চেহারায় দুঃচিন্তার ছাপও লেগে যাচ্ছে। সরকার উন্নয়নের জন্য মরিয়া, একথা আমরা নিশ্চিত। কিন্তু সরকার হয় তো বুঝতে পারছেন না, এতে মহেশখাবাসী দুঃচিন্তায় প্রহর গুনছে। আমাদের মধ্যে কত উৎকণ্ঠা_ একথা মহেশখালীর লোকেরাই ভালো জানেন। কথা হচ্ছে, আমরা কি উন্নয়নের দিকে যাচ্ছি নাকি আগ্রসনের দিকে?
মহেশখালীতে প্রচার হওয়া উন্নয়ন কেবল প্রেস বিজ্ঞপ্তির মতো। প্রেস বিজ্ঞতিতে যা লেখা আছা তাই। তাহলে মহেশখালীতে হতে উন্নয়নের প্রেস বিজ্ঞপ্তি কেবল "সিঙ্গাপুর"! এ প্রেস বিজ্ঞপ্তি জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। তা কেবল বাস্তবিক কী হতে যাচ্ছে, সেটির পুরো ম্যাপ না জানার কারণে। মহেশখালীবাসী জানতে চায়, মূলত হচ্ছেটা কী? উন্নয়ন নাকি প্রেস বিজ্ঞপ্তির সিঙ্গাপুর? সেটির পুরোপুরি নকসা সবার জ্ঞাতার্থে উন্মোচন করতে আপত্তি কোথায়? তাহলে আমরা কি এই কথিত উন্নয়নকে সিঙ্গাপুর হিসেবে ধরে নিবো নাকি আগ্রাসন হিসেবে?
এখানে হতে যাওয়া উন্নয়ন প্রকল্প কেবল প্রেস বিজ্ঞপ্তির মতো। কেননা কোত্থেকে কীভাবে এবং কারা কী কী স্থাপন করতে যাচ্ছে, সেটি আমাদের জ্ঞানে কূলায় না। যারা বুদ্ধির জোর কিংবা ক্ষমতার জোর নিয়ে উদ্বাস্তুকরণকে পুনর্বাসের বিজ্ঞাপন বলে চাপিয়ে দিচ্ছেন, তাদের ভবিষ্যত কী, সেটি কে ভাববে সেখবর রাখেন? যদি জনগণের চাহিদা, পরিবেশর ভারসাম্য রক্ষা এবং মাতৃভূমির অস্তিত্ব টিকে না থাকে তাহলে আগ্রাস কীভাবে উন্নয়ন হয়? আমরা শঙ্কিতবোধ করছি, মহেশখালী বস্তুত কী কী বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে। একইসাথে কী পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করা হবে সেটি নিয়েও আমরা কম শঙ্কিত নই।
বিশেষ করে ১২ নং মৌজার খাস জমি অধিগ্রহণেই আমাদের যত আপত্তি। কেননা ১২ নং মৌজায় বসবাসকারীদের তিন-চতুর্থাংশ ভূমিহীন। এসব ভূমিহীনদের ওপর উদ্বাস্তুকরণর মাধ্যমে উন্নয়নকে কখনও সমর্থন করা যায় না। উন্নয়ন হতে হবে পরিপকল্পিত এবং কল্যাণকর। আবারও বলছি, আমরা মহেশখালীবাসী উন্নয়নের বিপক্ষে নয়, বরং জাতির জনকের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে সরকারের একান্ত সহযোগী। তবে কোনো অবস্থাতেই জনগণকে উচ্ছেদ করা যাবে না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে এবং ভূমিহীনদের কথা মাথায় রেখে মহেশখালীর ১২নং মৌজায় কোনো প্রকল্প স্থাপন করা যাবে না, একইসাথে উচ্ছেদও করা যাবে না। আমরা মহেশখালীর পরিচয়ে বেড়ে ওঠতে চাই।
উন্নয়নের স্বার্থে এ পর্যন্ত যেটুকু জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে সেটুকুতেই সীমাবদ্ধ রেখে পরিপকল্পিত উন্নয়ন ও উন্নয়নের বাস্তবাবিক রূপরেখা জনগণের সামনে প্রকাশ করা হোক। আমরা এখনও সন্দেহের মধ্যে আছি। কাজেই কী কী প্রকল্প তাতে বাস্তবায়িত হবে; এর সুস্পষ্ট রূপরেখা আমাদের সামনে প্রকাশ করা হোক। এতে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে। নইলে উদ্বাস্তুজনতা পরবর্তীতে বড়ধরনের হুমকির কারণ হতে পারে।