Advertisement


মাতারবাড়িতে কাজ করছেন ১৪ দেশের এক হাজার প্রকৌশলী

দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ।।
চারদিকে তাকালে শুধু ধু ধু প্রানত্মর! মাটিবাহী একেকটি ট্রাক যায় আর পেছনে বালি উড়তে থাকে। চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ! দিনে ৮ হাজার মেট্রিকটন কয়লা পুড়িয়ে এখানেই উৎপাদন হবে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সেই স্বপ্ন বাসত্মবায়নেই মহেশখালীর মাতারবাড়ির সাগর পাড়ে বইছে ধুলোঝড়। বিশাল এই প্রকল্প বাসত্মবায়ন করতে সাগর পাড়ের ১৬০০ একর ভূমিতে ১৪ দেশের হাজারো প্রকৌশলীর নেতৃত্বে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে আড়াই হাজার শ্রমিক।
সড়কপথে যাতায়াতের পথ সুগম না হওয়ায় জলপথেই এই প্রকল্পের কাজের যোগান দেয়া হচ্ছে শুরম্ন থেকেই। এমনকি বিদেশী প্রকৌশলীদের থাকার জন্য প্রকল্পের পাশে একটি জেটিতে সার্বড়্গণিক জাহাজ রয়েছে। সেই জাহাজে থেকেই প্রকল্পের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের অগ্রগতি জানতে গত শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পের আওতাধীন পুরো এলাকার ভূমি উন্নয়নের কাজ চলছে। কোথাও ট্রাক দিয়ে মাটি একস’ান থেকে অপর
স’ানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আবার কোথাও ড্রেজিংয়ের মাটি দিয়ে নিচু এলাকা ভরাট করা হচ্ছে। সাগর থেকে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ, ২৫০ মিটার চওড়া ও ১৮ মিটার গভীর একটি কৃত্রিম চ্যানেল তৈরির কাজও ৯০ শতাংশ শেষ। আর এই চ্যানেল তৈরি করতে গিয়ে পাওয়া মাটি প্রকল্পের আওতাধীন নিচু এলাকা ভরাটের কাজ করা হচ্ছে।
বিশাল এই জায়গার কোথায় কী হবে সেই অনুযায়ী একটি মাস্টারপস্ন্যান করা হয়েছে উলেস্নখ করে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরম্নল ইসলাম বলেন, ‘পুরো প্রকল্পের মাস্টারপস্ন্যান করা হয়ে গেছে। এখন সেই পস্ন্যান অনুযায়ী নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে প্রকল্পের সবচেয়ে বেশি অগ্রসর হয়েছে চ্যানেল তৈরির কাজ।’
চ্যানেলের কাজ আগে কেন করা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই প্রকল্পের জন্য ভারী অনেক যন্ত্রপাতি আনতে হবে। এজন্য জাহাজগুলোকে ভেড়াতে হবে। তাই সবার আগে চ্যানেল নির্মাণ জরম্নরি ছিল। এজন্য প্রকল্পের শুরম্ন থেকেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ড্রেজার ক্যাসিওপিয়া দিয়ে খননের কাজ করা হয়েছে। আমরা জাহাজকে একেবারে আমাদের প্রকল্পের ভেতরে নিয়ে আসতে পারবো।
কবে নাগাদ জাহাজ আসা শুরম্ন করবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী মাস থেকেই জাহাজে করে বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট আসবে।
বিভিন্ন এলাকায় মাটি ভরাট ও স’াপনা নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রকল্পে যারা কাজ করছে তাদের আবাসনের জন্য ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়া ১৩২ কেভির একটি সাব স্টেশন নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আগামী মাস থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য পাইলিংয়ের কাজ শুরম্ন হবে।
একটি পাওয়ার স্টেশন নির্মাণের কাজও ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
দিনে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে কী পরিমাণ কয়লার প্রয়োজন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দিনে আট হাজার মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হবে। আর একেকটি জাহাজে আসবে ৮০ হাজার মেট্রিক টন। সেই হিসেবে প্রতি সপ্তাহে হয়তো একটি করে কয়লাবাহী জাহাজ ভিড়বে এই বন্দরে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী জানান, চীন, জাপান ও কোরিয়ার তিনটি কোম্পানির অধীনে এই তিন দেশ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জার্মানি, ভারত, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডের প্রকৌশলীদের সাথে আমাদের দেশের প্রকৌশলীরাও কাজ করছেন। প্রকৌশলীদের সংখ্যা প্রায় এক হাজার হলেও এদের নেতৃত্বে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক দিন রাত কাজ করছেন। আগামী মাস থেকে এই সংখ্যা আরো বাড়বে।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই বছর ধরে চলমান এই প্রকল্পের আওতায় ড়্গতিগ্রসত্ম মানুষদের পুনর্বাসনের শর্ত ছিল। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরম্নল হামিদ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে ড়্গতিগ্রসত্ম মানুষদের জন্য কারিগরি প্রশিড়্গণ কর্মসূচি চালুর কথা বলেছিলেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী মনিরম্নল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসন প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে। এছাড়া একটি কারিগরি প্রশিড়্গণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সেখানে স’ানীয়দের কাজ শেখানো হচ্ছে। যদি সম্ভব হয় তাহলে তাদের মধ্য থেকে কাউকে কাউকে এই প্রকল্পে চাকরি দেয়ার কথা বিবেচনা করা হবে।
কয়লা বিদ্যুৎ নিয়ে বিশ্বব্যাপী পরিবেশবাদীদের আপত্তি রয়েছে। তাই এই প্রকল্পে পরিবেশ দূষণ কমাতে কী পদড়্গেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে মনিরম্নল ইসলাম বলেন, আমরা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন করবো এবং চুলিস্নটি ৯০০ ফুট উঁচুতে ধোঁয়া নির্গমন করবে। এতে বায়ু দূষণের মাত্রা কম হবে।
কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হতে পারে জানতে চাইলে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (সিপিজিপিএল) এর ব্যবস’াপনা পরিচালক ও ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎাদন প্রকল্পের পরিচালক আবদুল মোত্তালিব বলেন, প্রাথমিকভাবে ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ধারণা করা যাচ্ছে আমরা ২০২৪ সালের শুরম্নতে উৎপাদনে যেতে পারবো।
জানা যায়, ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকার কয়লা বিদ্যুৎ নির্মাণ প্রকল্পে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) দিচ্ছে ২৮ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ ও বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৭ হাজার কোটি টাকা ।
উলেস্নখ্য, প্রকল্পটি চালু হলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণ হবে। ২০২৩ সালে প্রথম পর্যায় শেষ হওয়ার পর আরো ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ড়্গমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরম্ন হওয়ার কথা রয়েছে। আগামীতে আনোয়ারা ও মিরসরাইয়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, কর্ণফুলীর তলদেশে টানেলে অনেক বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে।