এম. বেদারুল আলম :
কোরবানের ঈদের জন্য পালিত গরু-মহিষ প্রতি
রাতেই চুরি হচ্ছে। লকডাউনের সুযোগে আন্তজেলা গরু চোর সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে
উঠেছে। নিরুপায় হয়ে গরুর মালিক-খামারিরা রাত জেগেই শেষ সম্বল পাহারা
দিচ্ছে। গেল ৩ মাসে ২ শতাধিক গরু মহিষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। অনেক গরু উদ্ধারের
মুখ দেখলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গরুর হদিস পাওয়া যায়নি। গেল ১৫দিনের মধ্য
শুধু সদরের ১০টি ইউনিয়নেই ৭০টির অধিক গরু মহিষ চুরি হয়েছে বলে দাবি
ক্ষতিগ্রস্থ মালিকদের। তারা চিহ্নিত গরু চোর সিন্ডিকেটদের গ্রেফতার এবং
চুরি হওয়া গবাদি পশু উদ্দারের দাবি জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে।
সদরের খরুলিয়ার হাবিব উল্লাহ জানান, আমি
অনেক ধারদেনা করে অষ্ট্রেলিয়ান জাতের ৩টি গরু পালন করি। কোরবানের হাটে
বিক্রির জন্য মোটাতাজা করতে অনেক টাকা খরচ করেছি। কিন্তু কিছুদিন আগে রাতে
আমার গোয়াল ঘরে চোরের দল হানা দিয়ে ৩টি গরুই নিয়ে গেছে। আমি চরম অর্থকষ্টে
থাকলেও গরুর খাবার বন্ধ করিনি। ৩টি গরুর আর্থিকমূল্য ৩ লাখ টাকার মত হবে।
আমি পূঁজি হারিয়ে এখন পথে বসেছি। অনেক খোঁজার পর এখনো গরু ৩টি পাইনি।
পিএমখালীর নয়াপাড়ার ফকির মোহাম্মদ জানান,
আমার অনেক কষ্টে অর্জিত টাকার সম্পদ ছিল ২টি মহিষ। কোরবানের হাটে বিক্রির
জন্য মোটাতাজা করে অনেক টাকা খরচ করেছি। কিন্তু চোরের দল গোয়াল ঘরে হানা
দিয়ে মহিষ ২টি নিয়ে গেছে। আমি চরম কষ্টে আছি। খেয়ে না খেয়ে মহিষ ২টি কিনে
পালন করছিলাম কিছু লাভের আশায়। এখন সব শেষ। আমার এলাকার বিশাল চোর
সিন্ডিকেট এবং বাহিরের চোর সিন্ডিকেট মিলে আমার মত অনেকের গরু-মহিষ চুরি
করে সর্বশান্ত করেছে।
এদিকে ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান
টিপু সুলতান এবং পিএমখালীর আওয়ামীলীগ নেতা জয়নাল আবেদীন জানান, গেল ১ মাসের
ব্যবধানে ৫০ টির মত গরু–মহিষ চুরি হয়েছে ২ ইউনিয়ন থেকে। চুরি হওয়া গরুর
মালিক ও ক্ষতির পরিমান নির্ণয় করেছেন তারা। অন্তত কোটি টাকার গরু মহিষ
লকডাউনের মধ্যে চুরি হয়েছে বলে তাদের দাবি।
স¤প্রতি চুরি হওয়া গরু-মহিষের মালিকরা হলেন
ঝিলংজার মুক্তারকুলের মৌলভী আজিজুল মোক্তারের ২টি গরু, পিএমখালীর ঝিলংজার
নয়াপাড়ার ফকির মোহাম্মদের ২টি মহিষ, একই এলাকার আমান উল্লাহর ২টি দেড় লাখ
টাকা দামের গরু, নুরুল হাকিমের ৩টি দেড় লাখ টাকা দামের গরু, ডিকপাড়ার আবদু
রশিদের ২টি গরু, বাংলাবাজার এলাকার রহমত উল্লাহর ১টি লাখ টাকা দামের গরু,
মুক্তারকুলের মোজাফ্ফর আহমদের ২টি দেড় লাখ টাকা দামের গরুসহ খরুলিয়ার অন্তত
৮টি বাড়ির গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে ঝিলংজা ইউনিয়নের ছাত্রলীগ নেতা মুন্না
চৌধুরী দাবি করেন, জেলার চোরাই গরু-মহিষের একটি বিশাল ডিপো পাওয়া গেছে।
সদরের ভারুয়াখালীর চৌধুরী পাড়ার গহিণ পাহাড়ে অস্ত্রে সজ্জিত একটি বিশাল
সিন্ডিকেট বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরি করে আনা গরু-মহিষ জমায়েত করে বিভিন্ন
এলাকায় বিক্রি করে আসছে। পিএমখালীর জুমছড়ির হিন্দু পাড়ার রুপনা শর্মার চুরি
হওয়া গরু উদ্ধারের জন্য গেলে তারা এই বিশাল সিন্ডিকেট দেখতে পায়। তারা
ঈদগাও তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মোঃ ইমরানের সহায়তায় গরু উদ্ধারে ভারুয়াখালী
গেলে সন্ত্রাসীদের বেগতিক অবস্থা দেখে ফিরে আসে। সন্ত্রাসীরা উদ্ধার করতে
যাওয়া পুলিশের টিমের উপর গুলি চালায়, পরে আরো পুলিশ নিয়ে উদ্ধার অভিযান
চালিয়ে স্থানীয় মেম্বার ফজলুল হকের সহায়তায় রুপনা শর্মার গরু উদ্ধারে সমর্থ
হয়। কিন্তু চোর সিন্ডিকেটের সংরক্ষিত এলাকায় তারা ঢুকতে পারেনি অস্ত্রের
ভয়ে।
পিএমখালীর ঘাটকুলিয়াপাড়ার মনি আলম নামের
আন্তঃজেলা গরুচোর সিন্ডিকেট পিএমখালী থেকে রুপনা শর্মার গরু চুরি করে
সেখানে জামায়েত করেছিল বলে দাবি মুন্না চৌধুরীর। সেখানে পিএমখালীসহ জেলার
বিভিন্ন এলাকার চোরাই গরু রয়েছে বলে জানিয়েছেন মুন্না চৌধুরী। মনি আলমকে
গ্রেফতার করলে পাওয়া যাবে বিশাল গরু সিন্ডিকেটের মুল রহস্য।
চুরি বন্ধে পদক্ষেপ এবং পুলিশের ভুমিকা নিয়ে
জানার জন্য কক্সবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আবু মোহাম্মদ
শাহজাহান কবিরকে বেশ কয়েকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় কিন্তু
মোবাইল রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
প্রশাসনিক তৎপরতা এবং চোর সিন্ডিকেটকে
সনাক্ত করার বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আশরাফুল আফসার বলেন,
আমি সকল উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ
দিয়েছি পাশাপাশি স্থানীয়দের এগিয়ে আসতে হবে চুরি নির্মুলে। রাতে পুলিশি
পাহারা জোরদার করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবিএম ইকবাল হোসাইনের সাথে আলোচনা
করবেন বলেও জানান তিনি। তিনি ভারুয়াখালী থেকে গরু উদ্ধার এবং সিন্ডিকেটকে
সনাক্ত করতে কাজ করছে বলে ও দৈনিক কক্সবাজারকে জানান।