Advertisement


দিনে সৈকতের ঝাউবন আর রাতে শহরের নানা পয়েন্টে ছিনতাইকারী আতংক

ছবিঃ কাল্পনিক

সৈয়দুল কাদের।।

কক্সবাজার শহরের প্রতিটি স্পটেই ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। সৈকতের ঝাউ বাগানে দিনের বেলায় একাকী হাটতে গেলেও পড়তে হচ্ছে ছিনতাইকারীদের কবলে। যার ফলে সর্বত্র ছিনতাইকারী আতংক বিরাজ করছে। এসব ছিনতাইকারীদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না সাংবাদিক, ও পর্যটকরা। আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যও ঝাউবনে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন।

কক্সবাজারের স্থানীয় নতুন বাহারছড়ার মকছুদ আলম জানান, ডাইবেটিস পয়েন্টে থেকে ঝাউবাগানের মধ্যদিয়ে হেটে কবিতা সৈবাল পয়েন্ট যাওয়ার জন্য কিছুদুর গেলেই তিনজন যুবক মোবাইলসহ নগদ টাকা কেড় নিয়ে সটেকে পড়ে। দুর থেকে ২/৩ জন লোক তা প্রত্যক্ষ করলেও তারা এগিয়ে আসেনি। যে যার যার মত চলে যায়। আমি স্থানীয় হলেও দীর্ঘদিন যাবৎ সৈকতে আসিনি। তাই একটু হাটতে এসেই ছিনতাইকারীদের কবলে পড়তে হয়েছে।

একজন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন।সাধারণ পোষাকে সৈকতে একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম। ডাইবেটিস পয়েন্টে পৌছলে লোকজন থেকে ঝাউবাগানে ছিনতাই হয় এ কথা শুনে কৌতুহল বশতঃ পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে আমার কাছ থেকেও সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে ছিনতাইকারীরা। বিষয়টি কোথাও প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। সবকিছু নিয়ে গেলেও নিরবেই চলে আসতে হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক মোহাম্মদ নুরুন্নবী জানান, ছিনতাইয়ের বিষয়টি শুনে আমরা অস্বস্থিতে আছি। কোথায় যেতেও ভয় লাগতেছে। পুলিশের তৎপরতাও তেমন নেই। তাই রাতে কোথাও যাওয়া হচ্ছে না। আমাদের পরিকল্পনাটা ভেস্তে গেছে। পর্যটক ছাড়াও বিভিন্ন হোটেল মালিকরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের মতে এটি পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। হঠাৎ ছিনতাইকারীদের উৎপাতের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ইতোমধ্যে কক্সবাজার গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী ছিনতাইকারী সিন্ডিকেট। এরা দিনের বেলায় সমুদ্র সৈকত এলাকায় বিভিন্ন পয়েন্টে ছিনতাই করে। রাতের বেলায় শহরের গুরুত্বপুর্ণ বিভিন্ন পয়েন্ট সার্কিট হাউজ সড়ক, কলাতলীর মোড়, লাবণী পয়েন্ট, স্টেডিয়াম, কোর্ট পয়েন্ট, গোলদিঘীর পাড়, হাসপাতাল এলাকা, লালদিঘীর পাড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ মোড়ে। ছিনতাইকারীরা এসময় কয়েকটি টমটম গাড়ি ব্যবহার করে। কোন দামী মোবাইল নিয়ে কোন পর্যটক কিংবা কোন লোক টমটমে উঠলে ছিনতাইকারীদের সদস্যরা টমটমের যাত্রীর মত অন্যান্য সিটে বসে যায়। সুবিধামত স্থানে গিয়ে ওই যাত্রীর সর্বস্ব কেড়ে নেয়। এদের নেটওয়ার্ক খুবই শক্তিশালী। যার ফলে প্রশাসন এখনো কোন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এদিকে পর্যটন শহর কক্সবাজারে হঠাৎ ছিনতাই বেড়ে যাওয়াকে ভাল লক্ষণ নয় বলে মনে করছেন স্থানীয় বিভিন্ন পেশার লোকজন। বৃদ্ধি পেয়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনা।

কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আবদুর রহিম জানিয়েছেন, কক্সবাজার পর্যটন শহর হলেও দেশের অন্যান্য জেলা শহরের চেয়ে কক্সবাজার শহর ছিল খুবই নিরাপদ। যার কারণে দেশ বিদেশের পর্যটকেরা কক্সবাজার চলে আসে। এটি কক্সবাজারের জন্য দীর্ঘদিনের সুনাম। রাত ২/৩ টায়ও বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটক এসে রুমের জন্য রাস্তায় হাটে কোন ভয়ভীতি ছাড়া। এটি ছিল কক্সবাজার শহরের জন্য বড় অর্জন। বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এই সুনাম বিনষ্ট হতে পারে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মোঃ মাসুম খান জানান - সম্প্রতি তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকজন ছিনতাইকারী জামিনে জেল থেকে বেরিয়ে এসেছে। হয়তো তারা এই ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে। আমরা জোর তৎপরতা চালাচ্ছি এই ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করতে।