Advertisement


মাতারবাড়ির ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

জরুরি সমস্যাগুলো দ্রুত সামাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের আস্তরিক হওয়ার আহ্বান


বার্তা পরিবেশক।।
মাতারবাড়ির উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে তাদের কোন বিরোধীতা নাই। তবে এখনও তাদের যে সব দাবি পূরণ হয়নি তা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য তারা সংশ্লিষ্টদের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন। গতকাল মহেশখালীতে একটি সংবাদ সম্মেলনে তার এ দাবি জানান। 

লিখিত বক্তব্যে তারা জানান -উচ্ছেদকৃত ৪৫ পরিবারের ৩৯ পরিবারের পূনর্বাসন হলেও ৬টি রোয়েদাদভুক্ত পরিবার ক্ষতিপুরণের টাকা অদ্যবধি পায়নি। তৎমধ্যে রোয়েদাদভুক্ত ৩টি পরিবারের তালিকায় নাম থাকা স্বত্ত্বেও তাদের পুনবার্সন হয়নি। অপরদিকে ৮/১০ জন ছাড়া বাকীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হয়নি। যারা পুনবার্সন হয়নি তাদের ভাড়া বাসায় থাকতে থাকতে দুঃখের সীমা নাই। এমতাবস্থায়, নির্মাণাধীন পুনর্বাসন প্রকল্প দ্রুত শেষ করে ৬ পরিবারের কাছে হস্তান্তরসহ যাদের নামীয় রোয়েদাদ প্রচার হয়েছে তাদের জন্য পুনবার্সনের ব্যবস্থা করতে হবে। কবে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে হবে এবং বাসা ভাড়া হিসাবে প্রদত্ত অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রদান করতে হবে। তাছাড়া কয়লাবিদ্যূৎ প্রকল্পের মাটি ভরাটের কারণে ৮টি স্লুইচগেট ও কালভার্টগুলিসহ পানি নিষ্কাষণের পথ বন্ধ এবং পানি নিষ্কাষনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় একটু বর্ষন হলেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পানি নিস্কাষণের একমাত্র খাল রাঙ্গাখালীর মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গত চার বছর ধরে মাতারবাড়ি বছরের ৪ মাস পানির নিচে থাকে। যে কারণে ওই সময়ে প্রচুর ঘরবাড়ি নষ্ট হচ্ছে, শিশুরা পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে, রোগশোক ছড়িয়ে পড়ছে, মানুষের চলাফেরায় বিঘ্ন হচ্ছে। যে সামান্য জমিতে চিংড়ী, ধান ও লবন চাষ করা যেত তাও ব্যাহত হচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের ক্ষতিপূরণ ও সাহায্য করতে হবে। ফলে জরুরীভিত্তিতে পানি নিঃস্কাশনের স্থায়ী সমাধান করতে হবে। নতুবা এ বর্ষায় আরো ভয়াবহ জলবদ্ধা হবে। তারা বলেন -বর্তমানে প্রকল্প এলাকায় আনুমানিক ৭৪০ এর মত এলাকার শ্রমিক কাজ করছে। এর মধ্যে মাসিকভিত্তিতে ২৩০ জনের মত ও দৈনিকভিত্তিতে ৫১০ জনের মত। এর বাইরে বর্তমানে প্রায় ১০/১২ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এছাড়াও কর্মরত শ্রমিকরা শ্রমের ন্যায্য মুল্য পাচ্ছে না। উক্ত বেতন প্রতি শ্রমিককে দালালকে দিতে কমিশন! দালালরা বেশিরভাগ টাকা কেটে রাখছে। অথচ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ক্ষতিগ্রস্থদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চাকুরী দেওয়ার কথা ছিল। তারপরও তারা ক্রমে শ্রমিক ছাঠাই করেছে। সম্প্রতি ২৬৪ জন শ্রমিককে চাকরীচ্যুত করে জেলার বাহির থেকে শ্রমিক নিয়োগ করেছে। মাতারবাড়ি ধলঘাটের সক্ষম সব শ্রমিকদের ব্যক্তিদের প্রকল্পের ভিতরে কাজ দিয়ে দ্রুত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি, বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যথাযথ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। অধিগ্রহণকৃত জমির কিছু ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলেও এখনো অধিকাংশ জমির মালিক ক্ষতিপূরণ পাইনি। এমনকি ভুয়া, কাগজ সৃজন করে এলও অফিস থেকে একজন অন্যজনের টাকা উত্তোলন করেছে। ফলে মূল ক্ষতিগ্রস্থ এখনও টাকা পাইনি। আবার অনেকেই এর বিরোদ্ধে মিছ মামলা করলেও তা হাতিয়ে দেখছেনা কর্তৃপক্ষ। তারা বলেন কেন ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে না  তা আমাদের স্পষ্ট করে জানাতে হবে। কতজন ক্ষতিপূরণের অর্থ পেয়েছেন এবং কতজন পাননি এবং কি কারণে পাচ্ছেন না তার একটি তালিকা প্রকাশ করতে হবে, যাতে সবাই এটা জানতে পারে। - বিলম্ব ও হয়রানি ছাড়া দ্রুত সকল প্রকার মামলা ও অংশিদারিত্ব ঝামেলা নিস্পত্তি করে ক্ষতিপুরণ প্রদান করতে হবে। তাছাড়া মাতারবাড়ীর সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য নির্মিত সরু সড়কটি দিয়ে বর্তমানে প্রকল্পের ভাড়ী মালামাল বহনের জন্য প্রতিদিন হাজারও ট্রাক, লরি, ডাম্পার গাড়ী চলাচল করছে। ফলে অহরহ দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি ৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুর ১টার সময় সড়ক দূর্ঘটনায় মাতারবাড়ী মাইজপাড়া গ্রামের প্রবাসী মোহাম্মদ হোছাইনের একমাত্র শিশু সন্তান (৩) নির্মম মৃত্যু হয়। ১৯ মার্চ ভয়াবহ সড়ক দূর্ঘটনায় ফুলজান মুরা গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে শেফায়েত উদ্দীন (২৭) , মাঝের ডেইল এলাকার নাছির মোহাম্মদের পুত্র মামুন নিহত হয়। আহত হয় আরো ৬ জন। এ ঘটনার জের ধরে গত ৬ এপ্রিল নিরাপদ সড়কের দাবীতে মাতারবাড়ী সিএনজি ষ্টেশনে বিশাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইতিপূর্বে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় আরও ৬ জন। অতিরিক্ত গাড়ী চলাচলের কারনে এলাকায় বায়ু দূষণ ও শব্দ দূষনের মাত্রা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এমতাবস্থায়, সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে এবং নিহতদের জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। অবিলম্বে প্রকল্পের জন্য নতুন রাস্তা তৈরী করে বর্তমানে চলাচলে রাস্তা দিয়ে প্রকল্পের মালামাল বহনকারী গাড়ি চলাচল সর্ম্পণরূপে বন্ধ করতে হবে। প্রকল্প এলাকায় ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের ফলে বর্জ্য পলিমাটি নির্গত হয়ে কোহেলীয়া নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। মাতারবাড়ি, ধলঘাট ও কালারমারছড়া ইউনিয়নের প্রায় দেড়লক্ষাধিক মানুষের কাছে এই নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। এই নদীটি মরে গেলে এই এলাকার মানুষের জীবনজীবিকা ও পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় ট্রলার চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে স্থানীয় শতাধিক ফিসিং ও কার্গো ট্রলার মালিকরা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। এছাড়া নদী মাছশুণ্য হয়ে গেছে।- নদীটি বাঁচিয়ে রাখার জন্য অনতিবিলম্বে সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া সাবিক বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য পাওয়ার জন্য প্রকল্প এলাকায় তথ্যকেন্দ্র বা ডেস্ক রাখতে হবে। যাতে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ ও সংবাদকর্মীরা প্রয়োজনীয় তথ্য সহায়তা পায়। তারা বলেন যথাসময়ে এই দাবীনামা পূরণ করা না হলে, আমাদের দাবীগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর পেশ করা হবে।