Advertisement


অফরোজা হত্যাঃ প্রধান দুই আসামি

খুনিদের শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন, সাবেক স্ত্রীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বাপ্পী ও তার সাবেক স্ত্রী

মাহবুব রোকন ।। 

কক্সবাজারের মহেশখালীতে ছয় দিন নিখোঁজ থাকার পর স্বামীরবাড়ির উঠোনে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে গৃহবধূ আফরোজার মরদেহ। ১৭ অক্টোবর (শনিবার) রাতে উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলা এলাকার ওই বড়ির উঠোনে মাটিচাপা অবস্থা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। লাশের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরে ময়না তদন্ত শেষে ১৮ অক্টোবর (রবিবার) সন্ধ্যায় লাশটি জানাজা পড়ে দাফন করা হয়। স্থানীয়রা মানববন্ধন করে  খুনিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান। এর আগে এ ঘটনায় বাপ্পীর সাবেক স্ত্রীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে হওয়া অপহরণ মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর হবে বলে পুলিশ জানিয়েছেন। 

স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে -নিহত আফরোজা বেগম (২৪) হোয়ানক ইউনিয়নের পুঁইছড়া এলাকার মোহাম্মদ ইসহাকের মেয়ে। তার স্বামী রাকিব হাসান বাপ্পী চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক। তিনি উত্তর নলবিলা এলাকার হাসান বশিরের ছেলে। গত ১১ মাস আগে তদের বিয়ে হয়। আফরোজার আগে বাপ্পীর আরও দুই স্ত্রী ছিল। 

মহেশখালী থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মহেশখালীর সব খবরকে জানান -গত ১২ অক্টোবর শ্বশুরবাড়ি থেকে আফরোজা বেগম ‘নিখোঁজ’ হন। এ ঘটনায় তার বাবা মোহাম্মদ ইসহাক বাদি হয়ে রাকিব হাসান বাপ্পীকে প্রধান আসামি করে চারজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ তার অনুসন্ধানে কাজ করের, স্বজনরাও বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়েও ব্যর্থ হন। আফরোজা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার স্বামী বাপ্পীরও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। এ নিয়ে গত ১৬ অক্টোবর থানায় ৫ জনের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা হয়। মামলার পরে পুলিশের অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে পুলিশ তথ্য পায় -ওই গৃহবধূকে খুন করে স্বামীর বাড়ির উঠোনেই মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। এ তথ্যের সূত্র ধরে মহেশখালী থানা পুলিশ শনিবার রাত ১১টায় তার স্বামী রাকিব হাসান বাপ্পির বাড়ির আঙিনায় মাটির নিচে পুঁতে রাখা অবস্থা থেকে আফরোজার লাশ উদ্ধার করেন। 

লাশের সন্ধান দিয়েছে বাপ্পীর প্রথম স্ত্রীর ৫ বছর বয়সী এক কন্যা শিশু। শিশুটিই এ গুমের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে জানাগেছে। 

স্থানীয় একাধিক সূত্র মহেশখালীর সব খবরকে জানান - আগের দুইস্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটার পর ১১ মাস আগে বাপ্পির সঙ্গে আফরোজার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল। পারিবারিক কলহের জেরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা পর্যন্ত গড়ায়। আফরোজা পার্শ্ববর্তী হোয়ানক ইউনিয়নে তার বাবার বাড়িতে চলে যান। কিছু দিন আগে মামলায় আপসরফার কথা বলে বাপ্পী স্ত্রী আফরোজাকে তার বাড়িতে নিয়ে আসেন। আগামী কয়েকদিন পর আদালতে মামলার ধার্য তারিখে তা আপস হওয়ার কথা ছিল। বাড়িতে নিয়ে স্ত্রীর উপর ফের নির্যাতন শুরু করে প্রভাষক বাপ্পী। এরই মধ্যে গত ১২ অক্টোবর বাপ্পীর মা রোকেয়া হাসান তার পুত্রবধূ আফরোজা নিখোঁজ হয়েছে বলে আফরোজার বাবার বাড়িতে খবর দেন। একই সময় থেকে আফরোজার স্বামী রাকিব হাসান বাপ্পীকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন থেকেই রাকিব হাসান বাপ্পি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। বাপ্পীর বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। অনেকেই আফরোজাকে খুন করা হয়েছে বলে ধারণা করতে থাকে। এর পর থেকে আফরোজাকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পুলিশও বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালায়।   

এদিকে শনিবার রাত ১১টায় এএসপি (মহেশখালী সার্কেল) জাহেদুল ইসলাম, মহেশখালী থানার অফিসার ইন-চার্জ(ওসি) মো. আবদুল হাই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে বাপ্পীর বাড়ির উঠোনের মাটি খুঁড়ে আফরোজার লাশ উদ্ধার করেন। 

মহেশখালী থানার অফিসার ইন-চার্জ(ওসি) মো. আবদুল হাই মহেশখালীর সব খবরকে জানান -লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ছুরতহাল প্রতিবেদন করেন, পরে ময়না তদন্তের জন্য জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ১৮ অক্টোবর (রবিবার) সন্ধ্যায় ময়না তদন্ত শেষে লাশটি দাফন করা হয়। ওসি জানান -১৬ অক্টোবর আফরোজার পিতা বাদি হয়ে বাপ্পীকে প্রধান করে ৫ জনের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা করেছিলেন, বর্তমানে ওই মামলাটিই ধারা সংযোজনা করে হত্যা মামলা হিসেবে তদন্ত করা হবে। মামলাটি তদন্ত করছেন কালারমার ছড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইন-চার্জ পরিদর্শক(এসআই) জহিরুল ইসলাম। 

এসআই জহিরুল  জানান - মামলার অন্য আসামিরা হলেন বাপ্পীর সাবেক স্ত্রী কামিনী আফরিন কংকাস ওরফে কণা, বাপ্পীর মা রোকেয়া হাসান, ভাই মোহাম্মদ আসিফ ও ভগ্নীপতি শহীদুল ইসলাম কাজল। তিনি বলেন লাশটি প্রায় অর্ধগলিত অবস্থায় পাওয়াগেছে। আফরোজার ঘাড়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আসামিদের সন্ধানে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে বলেও জানান তিনি। 

এদিকে ১৮ অক্টোবর (রবিবার) সন্ধ্যায় আফরোজার মরদেহ হোয়ানকের বাবার বাড়িতে এসে পৌঁছুলে স্থানীয়রা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এ সময় তারা আফরোজার ঘাতকদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন করেন। 

[ প্রতিবেদনটি সম্পাদনার পর্যায়ে ]