Advertisement


মাস্টার ছেলে খোজঁ নেয় না বয়োবৃদ্ধ -অন্ধ মায়ের, বিক্রি করেছেন খুঁড়ে ঘরটিও


নিজস্ব প্রতিবেদক।।

নিরবালা দাশ গুপ্ত। বয়স আনুমানিক একশো বিশ বছর। ছেলে-মেয়ে ছোট থাকতেই মারা গেছেন স্বামী। নিজে খেয়ে না থেয়ে লালন পালন করেছেন চার ছেলে ও দুই মেয়েকে। কিন্তু ছেলেরা বড় হয়ে মা নিরবালা’কে ফেলে রেখে চলে যান যে যার মতো। ভরণ-পোষণের দায়িত্ব না নিয়ে উল্টো মায়ের থাকার জায়গাটাও বিক্রি করে দিয়েছেন মেঝো ছেলে শিমুল।

মহেশখালীর হোযানক ইউনিয়নের পূইছঁড়া গ্রামের বাসিন্দা নিরবালা। ঠিকমতো দেখতে পান না চোখেও। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এখন ঠাইঁ পলিথিনের ছাউনি দেওয়া জরাজ¦ীর্ণ মাটির ঘরে। 

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেল, শতবর্ষী এই বৃদ্ধা নিরবালার ৪ ছেলের এক সন্তান মারা গেছেন বছর বিশেক আগে। বাকি তিন সন্তানের বড় সন্তান বর্তমানে কিছুই করেন না। মেঝো সন্তান শিমুল কান্তি দেব কক্সবাজারের খুরলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং ছোট সন্তান কার্তিক দেবও চাকরী করেন চট্টগ্রামে একটি স্কুলে । বৃদ্ধার সন্তানদের মধ্যে মেঝো ছেলে স্ত্রী পুত্র নিয়ে থাকেন কক্সবাজারে, সবার ছোট কার্তিক থাকেন সন্ত্রীক চট্টগ্রামে আর বড় ছেলে বিভুল রয়েছেন বৃদ্ধা মায়ের সাথেই। 

জানা গেছে কক্সবাজারে থাকা মাস্টার ছেলে শিমুল ও চট্টগ্রামে চাকরী করা কার্তিক দুইজনের কেউই ১৫ বছর ধরে খোঁজ-খবর রাখেন না মায়ের। অথচ ঠিকই মায়ের জমিতে কৌশলে নিজেদের ভাগটুকু লিখে নিয়েছেন তারা দু’জনেই।

সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কান্নজড়িত কন্ঠে নিরবালা বলেন, “ আই আটা গাইট্টা খাই খাই মানুষ গইরয্যিদি পোয়াইন্দরে। ইতারা কেউ এহন আরে ন চাই। আর হবরও ন লই। আর থাকিবার ঘরঘানও বেছি দিয়ি মেঝ পোয়া শিমুল্ল্যা। এহন বড় পোয়ার বউয়ে আরে চায়, আর পায়খানা-প্রস্রাব পরিস্কার গরে।”

“ পোয়াইন্দরে বিশ্বাস গরি জায়গাও লিখি দিয়ি। এহন ইতারা আর থাকিবার জায়গাআনও বেছি ফেলাইয়ে। ”- আহাজারি করে বলেন নিরবালা।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল জানান, “ বৃদ্ধ মহিলাটির তিন সন্তানের দুই সন্তান তার কোন খোঁজ খবর রাখে না। তারা এলাকায়ও আসে না অনেক বছর ধরে। লকডাউনের সময় বৃদ্ধাটির করুণ অবস্থার কথা এক সাংবাদিক ফেইসবুকে দিলে, তখন দুই ছেলে তোপের মুখে কিছু টাকা পাঠিয়েছিলো। তবে এরপর থেকে আর কোন টাকা কিংবা খবর নেয়না বলে শুনেছি। উল্টো মায়ের থাকার জমিটাও বিক্রি করে দিয়েছে এক ছেলে”।