Advertisement


বড় মহেশখালীতে ফকিরাকাটা বেড়িবাঁধ সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ


নিজস্ব প্রতিনিধি।। মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালীর ফকিরাকাটা বেড়িবাঁধ  সড়কের ২কিলোমিটার সড়ক নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

মহেশখালী প্রকৌশলী অফিস (এলজিইডি) সূত্র জানা যায়, গত অর্থবছরে আগস্টে  বড় মহেশখালীর ফকিরাকাটা বেড়িবাঁধ সড়কটি  নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। সড়ক নির্মাণে বরাদ্দ ধরা হয়  ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। টেন্ডারে কাজটি পায় মেসার্স আইয়ুব কন্সটাকশন নামে এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। যার মালিক পার্শ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ঠিকাদার গিয়াস উদ্দিন। 

স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন আগে সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করে। কাজের শুরুতে নিম্নমানের ইট, বালু দিয়ে কাজ শুরু করলে স্থানীয়রা বাঁধা দিলে তোপের মুখে পড়ে ঐ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে মহেশখালী ইঞ্জিনিয়ার সহ সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িতরা এসে কিছু নিম্নমানের ইট ফেরত দেয় এবং কাজ সঠিক ভাবে করার জন্য ঠিকাদারকে সর্তক করেন বলে জানান স্থানীয়রা। কিন্তু কে শুনে কার কথা? আবারও নিম্মমানের ইট আর বালু দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে সড়ক নির্মাণের কাজ।  -অভিযোগ স্থানীয়দের। 

মহেশখালী এলজিইডির নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী জানান, ‘সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী সড়কের বেডকাটিং করার পর ৬-৭ ইঞ্চি বালু ফেলে মজবুত করতে হবে। এরপর হাফ ইঞ্চি পর পর ইটের সলিং বিছিয়ে তারপর বালু দেয়া হয়। বালুর ওপরে এক নম্বর ইট দিয়ে হেরিংবন্ড সম্পন্ন করতে হবে। কোনো অবস্থাতে সলিং হাফ ইঞ্চির বেশি কিংবা দুই নম্বর ইট ব্যবহার করা যাবে না’। কিন্তু দেখা যায় যেখানে বালু দিচ্ছে ৫ থেকে সাড়ে ৫ইঞ্চি। আর কিছু নিম্নমানের ইট ব্যবহার করতে আনলে আমরা তা ফেরত দিই এবং ঠিকাদারকে সর্তক করি। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঠিকাদার তড়িঘরি করে হাফ ইঞ্চির জায়গায় এক ইঞ্চি থেকে দুই ইঞ্চি গ্যাপ রেখে এবং কিছু নিম্নমানের ইট দিয়ে সলিং নির্মাণের কাজ করছেন। এমনকি সলিং নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে বালু দিয়ে সলিং ঢেকে দিয়ে হেরিংবন্ডের কাজ করতেছেন।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করা শ্রমিকের মাঝি কামাল হোসেন জানান, কাজ শুরুতে কিছু নিম্নমানের ইট ব্যবহার হয়েছে কিছু ইট ফেরত দেওয়া হয়েছে। আর এখন ইটের স্তুপে যে দেড় নম্বর বা নিম্মমানের ইট দেখা যাচ্ছে তা রাস্তার নিচে ঢুকে দেওয়ার জন্য নির্দেশনার কথা জানান এবং সেই মতেই কাজ হচ্ছে  বলেন। তিনি আরও বলেন নিম্নমানের ইট ব্যবহারের কারণে কিছু স্থানীরা এসে কাজে বাঁধা দিয়ে ছিল পরে ঠিকদারসহ স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে সবকিছু ঠিকঠাক করে আবারও রাস্তার কাজ চলতেছে বলে জানান।

বড় মহেশখালীর ফকিরাকাটার ফরিদুল আলম জানান, বেড়িবাঁধবাসী অনেক দিন পর একটি সড়ক পেয়েছি।  কিন্তু যে ভাবে অনিয়ম করে দুই নম্বর ইট দিয়ে রাস্তা তৈরী করতেছে তা নিমিষেই নষ্ট হয়ে যাবে। এর জন্য আমরা স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলেও কাজ হচ্ছে না।  

একই এলাকার সেকান্দরের পূত্র রশিদ জানান, শুরুতেই নিম্নমানের ইট ব্যবহারের কারণে বাঁধা দিলে কিছু দুই নম্বর ইট ফেরত পাঠান ইঞ্জিনিয়ার, আবারও তারা নিম্নমানের ইট ও বালু ব্যবহার করে তড়িঘড়ি করে রাস্তা তৈরি করেই চলছে। 

নুর আহমদের পূত্র এনাম বলেন এই সড়কটি দীর্ঘদিন থেকে অবহেলিত। সড়কটির নির্মাণকাজ সঠিকভাবে করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। আমরা ঠিকাদারকে নিম্নমানের ইট দিয়ে কাজ করতে নিষেধ করলেও তিনি মানছেন না। এভাবে কাজ করার ফলে সড়কটি দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আমরা এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাই। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চেয়ারম্যান সড়ক নির্মাণ কাজে নিম্নমানের  ইট ব্যবহার করার কথা অস্বীকার করে বলেন, ভাটা থেকে ইট নিয়ে আসার সময় কিছু খারাপ ইট আসতে পারে। নিম্নমানের দুই গাড়ি ইট ফেরত দেওয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি সে বিষয়ে অবগত নয় বলে প্রতিবেদককে পকেট থেকে  টাকা দিয়ে বিষয়টা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

মহেশখালী উপজেলা প্রকৌশলী সবুজ কুমার দে বলেন, রাস্তার কাজ শুরুর দিকে দুই গাড়ি নিম্নমানের ইট আনলে তা আমরা সাথে সাথে ফেরত দিই এবং নিম্মমানের কোন কাজ করা যাবে না বলে ঠিকাদারকে সর্তক করি।  সড়ক নির্মাণে তদারকি আরও বাড়ানো হয়েছে। আমার কাজ যে রকম নির্দেশনা আছে সেরকম বুঝিয়ে নেওয়া হবে। কাজে কোন রকম অনিয়ম পেলে  আমরা কাজ বুঝিয়ে নেব না এবল  বিল আটকিয়ে দেওয়াসহ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।