Advertisement


লবণ চাষের বেহাল অবস্থা, অন্য পেশায় চলে যেতে চায় চাষিরা


সৈয়দুল কাদের।।
লবণ নিয়ে চিন্তিত চাষীরা। অনেক চাষী ইতোমধ্যে অন্য পেশায় চলে গেছেন। দাম বাড়বে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়মিত দিলেও কোন সুরাহা হয়নি অদ্যবদি। তাই আগামী মৌসুমে লবণ চাষের জমি অনেকাংশে কমে যাবে এমনটি বলছেন লবণ চাষের জমির মালিকরা। অনেক লবণ চাষীই অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন।


বৈশাখ মাসের প্রায় শেষ পর্যায়ে। বৃস্টি না হওয়ায় এখনো চলছে অধিকাংশ প্রজেক্টে লবণ উৎপাদন। এই লবণ কি করবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন লবণ চাষীরা। জমির মালিক মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের ফকির খালী পাড়ার এম আজিজুর রহমান আক্ষেপ করে জানালেন, আমাদের প্রজেক্টের অধিকাংশ জামিতে লবণের পরিবর্তে ধান চাষ করার প্রস্তুতি নিয়েছি। লবণ চাষের জন্য কোন চাষীই উৎসাহিত হচ্ছে না।

বিগত সময়ে মিয়ামার থেকে চোরাই লবণের কারণে চাষীরা ন্যায্যমুল্য পায়নি। এখন কেন দাম পাওয়া যাচ্ছেন তা আমরা বুঝতে পারছিনা। ইতোমধ্যে লবণ চাষীরা বৈশাখের খরতাপে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। এত কষ্ট করে লবণ উৎপাদন করে ন্যায্যমুল্য না পেলে চাষী পাব কোথায়। সরকারের উচ্চ মহল থেকে প্রতিনিয়ত আশস্ত করা হলেও তার প্রতিফলন মাঠ পর্যায়ে পড়েনি। কেন বাড়ছে না লবণের দাম আমরা বুঝে উঠতে পারছি না।

আগামী মৌসুমে শুধু আমাদের প্রজেক্টে নয়, কৃষি জমির পাশাপাশি সবকটি প্রজেক্টেই লবণের পরিবর্তে ধান চাষ হবে। ইতোমধ্যে যারা লবণ চাষ করেছে তারা বিপুল টাকা লোকসান দিয়েছেন। এমন ঝুকি আর নিতে চায় না কেউ। প্রতি বছর লোকসান দেওয়া যায় না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর উপর আস্থা রাখি। কিন্তু তিনি বারবার বলার পরও কেন বাড়ছে না লবণের দাম বুঝি না।
এদিকে বৃস্টি হলেই লবণ মৌসুমের ইতি টানবেন চাষীরা। প্রতি মৌসুমে উৎপাদিত লবণ যত্মসহকারে জমিয়ে রাখলেও এখন তেমন আগ্রহ নেই। মাঠ পর্যায়ে এখন লবণ বিক্রি হচ্ছেনা প্রায়। যা বিক্রি হচ্ছে তা প্রতি কেজি সাড়ে ৩ টাকা দরে। এই দরে বিক্রি হলে চাষীদের অর্ধেক টাকা লোকসান যাবে।

লবণ চাষী বাঁচাও পরিষদের সদস্য সচিব এহছানুল করিম জানিয়েছেন, সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিকের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হলে লবণ আমদানি নিষিদ্ধ করে সরকার। এখনো সরকার কোন প্রকার লবণ আমদানি করেনি। এরপরও দরের কোন পরিবর্তন হয়নি। বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় লবণ চাষীদের মাঝে আশার সঞ্চার হলেও সিন্ডিকেটের কারণে লবণের মুল্য বৃদ্ধি পায়নি। যতদিন পর্যন্ত সালফার ডাই অক্সাইড মিশ্রিত লবণ আমদানি বন্ধ হবে না ততদিন পর্যন্ত লবণের ন্যায্যমুল্য নিশ্চিত হবে না। আমরা চাই লবণের ন্যায্যমুল্য নিশ্চিত করতে সালফার ডাই অক্সাইড মিশ্রিত লবণ আমদানি নিষিদ্ধ করা হউক।


লবণ চাষী মনজুর আলম জানিয়েছেন বর্তমান চলতি মৌসুমে ১ একর জমিতে লবণ চাষ করতে খরচ পড়ে প্রায় ২ লক্ষ টাকা। মাঠ পর্যায়ে উৎপাদিত লবনের মন প্রতি মুল্য ১৩০ থেকে ১৬০টাকা। খুবই করুণ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন লবণ চাষীরা। আমরা আর সহ্য করতে পারছি না। কঠোর লকডাউনে লবণচাষীরা মারাত্মক অর্থ সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অনেক চাষী না খেয়ে আছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে।

চৌফলদন্ডীর লবণ চাষী জাফর আলম জানিয়েছেন, লবণ চাষ করার আর ইচ্ছে নেই। তাই অন্য একটি পেশায় জড়িয়ে পড়েছি। আর ওই পেশায় ফিরতে চাই না। দীর্ঘদিন লবণ চাষ করে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় লবণ চাষের সাথে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ জড়িত। কিছু মোনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা তাদের স্বার্থ হাসিল করতে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির জন্য বিদেশ থেকে সালফার ডাই অক্সাইড মিশ্রিত লবণ ইন্ডাস্ট্রির চাহিদার পরিমাণের চেয়ে বেশি লবণ আমদানি করে বাজার সয়লাব করায় দেশীয় লবণ ন্যায্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। লবণের ন্যায্য মুল্য না পেলে দেশীয় এ শিল্পকে বাঁচানো যাবে না। অনেকেই লবণ উৎপাদন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কারণ একটাই লবণের ন্যায্য মুল্য পাচ্ছে না।


বাংলাদেশ লবণ পরিষদের সভাপতি মোস্তফা কামাল চৌধুরী জানিয়েছেন, লবণের ন্যায্যমুল্য নিশ্চিত করতে অনেক আন্দোলন সংগ্রামের পরও কোন কাজ হচ্ছে না। চাষীরা চায় লবণের ন্যায্যমুল্য। মিল মালিকরা তা চায় না। তারা বেশী মুনাফার দিকেই দৌড়াচ্ছে। লবণ শিল্পকে ধংস করতে প্রতিনিয়ত তৎপর রয়েছে। এতে জেলার ৫ জন সাংসদকে একযোগে কাজ করতে হবে। বর্তমানে সালফার ডাই অক্সাইড মিশ্রিত লবণ আমদানি করে এরা লবণ শিল্পকে ধংস করে দেশকে আমদানি নির্ভর করতে চায়। এ বিষয় সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আবারো অবহিত করা প্রয়োজন।