Advertisement


সেই দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন এর চাকরি নাই

সব খবর ডেস্ক।। বৃহত্তর চট্টগ্রামে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান করে দুর্নীতিবাজদের ভিত কাঁপিয়ে দেওয়া দুদক কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিনকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলির পর এবার তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বুধবার দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তার চাকরিচ্যুতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়। -খবর ঢাকা টাইমস এর। 

আদেশে বলা হয়, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৫৪ (২) তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মো. শরীফ উদ্দীন, উপ-সহকারী পরিচালক, দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যক্রম, পটুয়াখালীকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো। তিনি বিধি মোতাবেক ৯০ দিনের বেতন এবং প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন।’ আদেশটি আজ থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

দুদকের চাকরি বিধিমালা ৫৪ এর ২ ধারায় বলা আছে— ‘এই বিধিমালায় ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কোন কারণ না দর্শাইয়া কোন কর্মচারিকে নব্বই দিনের নোটিশ প্রদান করিয়া অথবা নব্বই দিনের বেতন নগদ পরিশোধ করিয়া তাহাকে চাকরী হইতে অপসারণ করিতে পারিবে।’

এর আগে, গত বছর ১৬ জুন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পরিচালক মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে মো. শরীফ উদ্দিনসহ আরও ২১ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছিল দুদকের বিভিন্ন ইউনিটে। তখন শরীফকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়েছিল।

তখন তার এ বদলিকে স্বাভাবিক চোখে দেখেননি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলকারী সংগঠকরা। কেননা গত দুই বছরে তার বিছানো জালে আটকা পড়তে হয়েছে সরকারি বড় কর্তা থেকে ছোট কর্মচারী, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ থেকে পাড়ার পাতি নেতাকেও। রেলওয়ে থেকে গ্যাস অফিস। ভূমি অফিস থেকে হাসপাতালের ক্যান্টিন। পাসপোর্ট থেকে নির্বাচন কমিশন অফিস। তার কারণে কোন স্থানই ফাঁক দিয়ে যেতে পারেনি দুর্নীতিবাজরা। পুরো চট্টগ্রামজুড়ে চষে বেড়িয়েছেন আর একের পর এক চমক লাগানো সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে কুড়িয়েছেন প্রশংসা।

ওই সময়ে টিআইবি চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, যেখানে সরকারি কর্মকর্তারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন সেখানে দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দীন ছিলেন ব্যতিক্রম। তার সাহসী অভিযান ও পদক্ষেপে দুর্নীতিবাজদের ভিত নড়ে গিয়েছিল। মূলত প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়েই তাকে গণ-বদলির সিরিয়ালে ফেলে কৌশলে চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে গতি কমবে আর বেপরোয়া হয়ে উঠবে দুর্নীতিবাজরা। চট্টগ্রামের দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনকে চলমান রাখতে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে শরীফ উদ্দীনের বদলি প্রত্যাহারের দাবি ওঠেছে।

আলোচিত যত অভিযান: আলোচিত দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দীন ২০২১ সালের ১৬ জুন হালনাগাদ ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে অর্ন্তভুক্ত করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালকসহ ইসির ৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। এর আগে, গত ১৫ জুন রোহিঙ্গা নাগরিকদের অবৈধ উপায়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান ও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণের ঘটনায় ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সরফরাজ কাদের রাসেলসহ ৬ জন এবং ১২ জুন ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইসমাইল বালিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন শরীফ।

তবে ১০ জুন দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ প্রদান করায় সাবেক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলামের (বিএসসি) বড় ছেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মো. মুজিবুর রহমান, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সারওয়ার হোসেন, সাবেক ব্যবস্থাপক মো. মজিবুর রহমান, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, সার্ভেয়ার মো. দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচনায় আসেন শরীফ উদ্দীন। এ মামলায় মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সারওয়ার হোসেন, সাবেক কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান ও সার্ভেয়ার মো. দিদারুল আলমকে গ্রেপ্তারও করে দুদক। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

এছাড়া তার আরও বেশ কয়েকটি আলোচিত অভিযান ছিল। তারমধ্যে ২০২১ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে সংলগ্ন কলাতলী বাইপাস রোড এলাকায় পুলিশ ব্যুরো অব ইন্টেলিজেন্স (পিবিআই) অফিস তৈরির জন্য এক একর (১০০ শতক) জমি অধিগ্রহণে জালিয়াতির ঘটনা উঠে আসে দুদকের এ কর্মকর্তার তদন্তে। এ ঘটনাসহ কক্সবাজারের মেগা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জমি অধিগ্রহণের দুর্নীতিতে জড়িত বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি ও রাজনীতিকের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়।

দেড় বছর আগের ঘটনায় দুদক কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকি, তদন্তে নামছে পুলিশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে চট্টগ্রামে মাঠে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সরকারি হাসপাতালের টেন্ডার কারা নিয়ন্ত্রণ করে, হাসপাতালে টেন্ডারবাজি, বদলি, নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে কারা জড়িত, বেসরকারি হাসপাতাল কারা পরিচালনা করছেন, ওই সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের যাবতীয় কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা এসব বিষয় তদন্তে নেমে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ও কয়েকটি মামলাও করেছিলেন শরীফ উদ্দীন।

এ বছরের মার্চে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে খালাসি পদে ১৯ জনকে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এক কোটি ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপকসহ চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন শরীফ উদ্দীন। একই মামলায় দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত খালাসি, ঠিকাদার, স্কুল শিক্ষক, পিয়ন, রেলের ড্রাইভারসহ আরও ৮ জনকে আসামি করা হয়।

একই মাসে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেতে সহায়তা ও জালিয়াতি করে জন্ম নিবন্ধনের মামলায় কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর মিজানুর রহমান, সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ কায়সার নোবেল, রফিকুল ইসলাম এবং পৌরসভার জন্ম নিবন্ধন শাখার অফিস সহকারী দিদারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তারও আগে জানুয়ারিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দুর্নীতি ও নানা অনিয়মে জড়িত শীর্ষ দালাল ও সাবেক সার্ভেয়ারকে গ্রেফতার করে শরিফ উদ্দিন।