Advertisement


ছোট মহেশখালীর ভোট খেলা শেষ হয়েছে, মানুষের মুখ থেকে ফুরোয়নি আলোচনা


ফুয়াদ মোহাম্মদ সবুজ।। সংঘাত-সহিংসতা প্রাণহানি আর কোনোরকম অস্ত্রের ঝনঝনানি ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি উৎসবমুখর পরিবেশ আর উৎফুল্লতায় কাক ডাকা ভোর থেকে ভোটগ্রহণের মাধ্যমে শুরু হওয়া এ নির্বাচনে হাড়কাঁপানো শীতেও সাধারণ ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো চোখের পড়ার মতো৷ বিক্ষিপ্ত ঘটনা আর সহিংসতা প্রতিরোধে দিনভর সজাগ ভূমিকা ছিলো মহেশখালী থানা পুলিশ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, র‍্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আনসার বাহিনীসহ নির্বাচন কর্মকর্তারা। আর এভাবেই সারাদিন ভোট চলে নির্ভয়ে-নির্বিঘ্নে। প্রায় শেষ ধাপের এ নির্বাচনে ছোট মহেশখালীতে মোট ভোট পড়েছে শতকরা ৭৪ শতাংশ।
 
এদিকে ৭ম ধাপে অনুষ্ঠিত এ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। বিজয় হয়েছে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে নতুন মুখ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রিয়ানুল ইসলাম মঈন প্রকাশ রিয়ান শিকদার। আর পরাজিত হয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান জিহাদ বিন আলীসহ বাকি ৫ প্রার্থী। ভোটের দিন আগেও নির্বাচন নিয়ে স্বতন্ত্র-বিদ্রোহী আর আ.লীগ সমর্থিত প্রার্থীর মাঝে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। আ.লীগ সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বাকি ৫ প্রার্থী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগসহ সাংবাদিকদের মাঝে বিভিন্ন অভিযোগ ছুঁড়ে দেওয়া হলেও প্রচারণার শেষ দিনেও নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘনের মতো উল্লেখযোগ্য অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে তৎক্ষনাৎ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ। তাদের দাবি- মূলত কক্সবাজার-২ আসনের সাংসদ এমপি আশেক উল্লাহ রফিকসহ স্থানিয় আ.লীগের নেতৃবৃন্দ সেদিন তাদের ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজায় অংশ নিতে তারা নির্বাচনি এলাকায় গিয়েছিল। কিন্তু আ.লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে স্থানিয় আ.লীগের পূর্ণ সমর্থন থাকলেও নৌকার ভরাডুবি হয়েছে অকল্পনীয়ভাবে।

নানা জল্পনাকল্পনার এ নির্বাচন অংশ নেওয়া ক্ষমতাসীন দল আ.লীগের নৌকা প্রতীকে অকল্পনীয় ভরাডুবির বিষয়কে কেন্দ্র করে পুরো মহেশখালীজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এদিকে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চরম বিপর্যয় নিয়ে হিসেব কষছেন দলের নেতাকর্মীরা। দলের বিদ্রোহীদের দাপট ও অযোগ্য প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন দেয়াকেই পরাজয়ের বড় কারণ হিসেবে দেখছেন তৃণমূলের নেতারা। প্রার্থী নির্বাচনে ভুল, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া ও দলীয় নেতা-কর্মীরা অনেকাংশে নৌকার বিপক্ষে অবস্থায় নেওয়ায় নৌকার পরাজয় হয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকে। এবারের নির্বাচনে ছোট মহেশখালীতে চেয়ারম্যান পদে মোট ৬জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। তারা হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাস্টার এনামুল করিম, বিএনপি সর্মথিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল মোস্তফা বাশি, স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়ান সিকদার, বর্তমান চেয়ারম্যান জিহাদ বিন আলী, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুস সামাদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল মোস্তফা। আর মেম্বার পদে অংশগ্রহণ করেছেন মোট ৫২জন।

বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ি, মোট ১০টি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে ৩৯৪১ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোটর সাইকেল প্রতীকের রিয়ান সিকদার ৷ তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ঘোড়া প্রতীকের সিরাজুল মোস্তফা বাঁশি পেয়েছেন ৩৩৪৯ ভোট ৷ অপরাপর চেয়ারম্যান প্রার্থী নৌকা প্রতীকের মাস্টার এনামুল করিম পেয়েছেন ১১৬৮ ভোট, আনারস প্রতীকের মোঃ আব্দু সামাদ ৩১৪৮ ভোট, চশমা প্রতীকের জিহাদ বিন আলী পেয়েছেন ১১৬৩ ভোট ও অটোরিকশা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল মোস্তাফা পেয়েছেন ৪১ ভোট।

অন্যদিকে উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এ ইউনিয়নে নব নির্বাচিত প্রার্থী রিয়ানুল ইসলাম মঈন (রিয়ান শিকদার)-সহ মোট ৩ জনকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন- জিহাদ বিন আলী, আব্দুস সামাদ ও রিয়ানুল ইসলাম মঈন (রিয়ান শিকদার)। কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে গত ২রা ফেব্রুয়ারি এ বহিষ্কার আদেশ দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, এ ইউনিয়নে ২০১৬ সালের ২২ মার্চ আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রাথী জিহাদ বিন আলী ৬ হাজার ৮৮২ পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আবদু সামাদ পেয়েছিলেন ৩ হাজার ১৯৮ ভোট।

এদিকে নজিরবিহীন শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট শেষ হলেও মানুষের মুখ থেকে আলোচনা ফুরোয়নি। শীতে চায়ে কাপে ঝড় সমানে চলছে। এ মুখ চলছে ছোট মহেশখালী ছাড়িয়ে সমগ্র মহেশখালীতে। জেলার রাজনীতি পাড়াও বৈষয়িক আলোচনা সমানে মুখর। দলের নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ ও অভিমানের সারৎসার। তবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সমগ্র অর্গানই স্বস্থি ও তৃপ্তিতে ভরপুর হয়ে আছেন একটি কাঙ্খিত শান্তিময় নির্বাচন উপহার দিতে পেরে।