Advertisement


আজ ৪ মার্চঃ একাত্তরের এইদিনে

জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সরাদেশে চলছিল হরতাল। জন-আকাঙ্খা পূরণের লক্ষ্যে এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে কোন মূল্যে সংগ্রাম চালিয়ে যাবার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বেশ কিছু নির্দেশ জারী করেন। মুক্তি সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করার জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রত্যেকটি নির্দেশই তখন ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ। পুরো জাতি অপেক্ষায় থাকে একটি নির্দেশের।

এদিন তৎকালীন বেসামরিক দায়িত্বে নিয়োজিত এদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের মূলহোতা ও নির্দেশদাতা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী কিছু প্রস্তাব নিয়ে রাতে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে। বঙ্গবন্ধু আর অপেক্ষা করলেন না। ফরমান আলীর সব কথা শুনলেন। তিনি বাঙালীরা কিভাবে মারা যাচ্ছে তার বর্ণনা দিয়ে কোন প্রকার আপোষ মীমাংসা সম্ভব নয় জানিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে তাঁর সব দাবী মেনে নেয়ার কথা বললেন। ফরমান আলীকে এ দেশের কৃষক জনতার আত্মার দাবিটি সরাসরি বলাতে মি.ফরমান মন খারাপ করলেন। রাও ফরমান আবারো তার কথা শুরু করতে চাইলে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই বৈঠকে উপস্থিত আমাদের প্রথম প্রধান মন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ফরমান আলীকে এক ছাদের নিচে আর থাকা সম্ভব না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন। আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়। আমরা আর আলোচনা চাই না। আমরা মুক্তি চাই।

এদিনই পূর্বপাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবী জানায়। এ মুহুর্তে এটি দরকার ছিল খুব। এদিন সেনাবাহিনীর সাথে জনসাধারণের সংঘর্ষে শতাধিক লোক হতাহত হন, যার ফলশ্রুতিতে ঢাকাসহ পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান প্রধান শহরে কার্ফু জারি করা হয়। নুরুল আমিন ইয়াহিয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। সামরিক বাহিনী ব্যারাকে ফিরে না গেলে তাদের প্রতিহত করা হবে বলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দেন। স্টেট ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক হরতালের সময় শুধু বেতন দেয়ার জন্য দু'ঘণ্টা খোলা রাখার জন্য নির্দেশ দেন তিনি।

একইদিন চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে ১১৩নং সামরিক আইন আদেশ জারি করে জান্তা সরকার। এদিন চট্টগ্রামে নিহতের সংখ্যা ১২১, খুলনায় নিহত ৬। অপরদিকে ঢাকায় কারফিউ প্রত্যাহার হয় এদিন।
এদিন জনগণের মুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার ডাক দিয়েছেন সাংবাদিক ইউনিয়ন, তারা মিছিল ও জনসভা করার সিদ্ধান্তও নেন। সংবাদপত্রের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি করেন সাংবাদিক নেতারা। স্বাধিকার আন্দোলনকে সফল করতে নিউজপেপার প্রেস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভার প্রস্তাব, যে কোনও ত্যাগ স্বীকারের সংকল্প গ্রহণ করলেন তারা। স্বাধীনতার পক্ষে দেশের ২০ জন বিশিষ্ট শিল্পীর যুক্তবিবৃতি প্রকাশিত হয় এদিন, বেতার-টেলিভিশন বর্জনের সিদ্ধান্ত জানান দেন শিল্পীরা।
৬ মার্চের মধ্যে ঢাকা শহরে এবং ৭ মার্চের মধ্যে সারাদেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ। প্রতিটি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে ১ জন আহ্বায়ক ও ১০ জন সদস্য থাকবে।

এদিনের সবচেয়ে ব্যতিক্রমি ঘটনা ছিল পুলিশ আর তৎকালীন পুলিশের অধীনে থাকা বিজিবি'র পিলখানার জওয়ানদের জনতার মিছিলে যোগদান। সরকারি কর্মচারী হয়েও নিজের জীবন, চাকুরীর মায়া, পরিবারের প্রতি মোহ সবকিছুকে অস্বীকার করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পুলিশ আর ইপিআর জওয়ানরা যে সাহস দেখিয়েছে তা কোন কিছু দিয়েই শোধ করা যাবে না।

সবাই একসাথে কণ্ঠ মিলালেন "জয় বাংলা"।
সরকারি কর্মচারীদের পক্ষে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে এটিই ছিল প্রথম প্রকাশ্য প্রতিবাদ।