Advertisement


আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বালাই নেই, 'বিচার' নিয়ে ব্যস্ত মাতারবাড়ি পুলিশ ক্যাম্প, ওসির নজরদারি নাই


নিজস্ব প্রতিবেদক।।
মাতারবাড়িতে দিনকেদিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হলেও তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই মাতারবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের কর্মকর্তাসহ থানার অফিসারদের। জানা গেছে- থানায় কোন ভুক্তভোগী অভিযোগ নিয়ে গেলেই তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় মাতারবাড়ি ক্যাম্পে, আর তা পাওয়ার পরই অবৈধ বিচারের নামে সালিসি দরবার বসানোর জন্য জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে ক্যাম্পের পুলিশ। পুলিশ এ কাজে সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করেন নিদিষ্ট কিছু দালালকে। শালিশকারখ্যাত এ সব প্রভাবশালী ও দালাল ছাড়া সেবা পায় না নিরীহ ভুক্তভোগীরা। পুলিশের 'বিচার' করার কোনো আইনগত ভিত্তি না থাকলেও ভুক্তভোগিদের অনেকটা জোর করেই বাধ্য করে কথিত এ 'বিচারপক্রিয়া' শুরু করে। এর পরই শুরু হয় কালক্ষেপন -ঘুষ ও অবৈধ টাকার খেলা।


এমনই একজন ভুক্তভোগী মাতারবাড়ির সিকদার পাড়ার বাসিন্দা নুরুল আলম বাচ্চু। তিনি অভিযোগ করে বলেন, "কয়েকদিন আগে জোর করে আমাদের  প্রতিপক্ষ আমাদের মারধর করে আমাদের বসত ভিটা দখল করে নেন। তখন আইনি সহায়তা চেয়ে মাতারবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পে গেলে তারা থানায় অভিযোগ দিতে বলেন। পরে থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর প্রভাবশালীর ইন্ধনে নানা বাহানা করে আর বিষয়টি সুরহা করেনি।"

মাতারবাড়ির মিয়াজী পাড়া নামক এলাকার এক গৃহবধূ বলেন- "গভীর রাতে বাসায় আমাকে একা পেয়ে মারধর ও শ্লিলতাহানি কর হয়। এ ঘটনায় মহেশখালী থানায় এজাহার জমা দিলে তদন্তে আসেন মাতারবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের এস আই শাখাওয়াত। এক পর্যায়ে এখানকার নাম করা এক দালাল ধরে অভিযুক্তদের সাথে আঁতত করে উল্টে আমাকে হুমকি দেয় পুলিশ, ভালোমন্দ প্রতিবেদনও দেয়নি। একজন নীরিহ নাগরিক হিসেবে আমি এখন চরম নিরাপত্তা হীনতার ভেতর আছি।"

এমন অভিযোগের বিষয়গুলো মাতারবাড়িতে বেশ আলোচনার সৃষ্টি করে। পরে অনুসন্ধানে জানা যায়- মাতারবাড়ি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প হওয়ার খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে এলাকাটি। ফলে প্রকল্পকে কেন্দ্র করে মাদক, জবর দখল, মারামারি, চুরি, ছিনতাই ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক অবৈধ আধিপত্য বেড়েই চলছে। আর এ সবের সাথে কোনোনাকোনো ভাবে কতিপয় পুলিশের অনৈতিক যোগসূত্রতা আছে। অভিজ্ঞ সূত্রগুলো মনে করেছেন- ধারাবাহিক ভাবে মাতারবাড়ি পুলিশে এ সব চলতে থাকলেও এ সবে মহেশখালী থানা বা ওসির কোন প্রকার নজদারি, নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি নাই বললেই চলে৷

ওয়াকিবহাল সূত্রগুলের দাবি- প্রতিনিয়ত অসহায় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ জমা পড়ে থানায়। থানা থেকে তা সবের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় মাতারবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের কর্মকর্তাদের। সেই সুযোগে তারা দালালের মাধ্যমে আপত্তিজনক 'বিচার' শব্দটি ব্যবহার করে সালিশ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।  টোটাল প্রক্রিয়াটি একটি বাণিজ্যিক রূপ ও কাঠামোর ভেতর দিয়ে যায়।

একাধিক সূত্রের অভিযোগ ও তথ্য রয়েছে -স্থানীয় এক প্রভাবশালী (মস্ত দালাল)'র ইশরার উপর ক্যাম্প থেকে থানায় তদন্ত রিপোর্ট দেওয়া- না দেওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে। -এমন অভিযোগ অনেক ভুক্তভোগীর। ক্যাম্পের আইসির সাথে গূঢ়সখ্যতার কারণে এ দালার যারপরনাই বেপরোয়া।

এদিকে দিনকেদিন মাতারবাড়ির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হলেও সে দিকে খেয়াল নেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তাদের নজরদারি না থাকায় দিন -দিন কিশোর গ্যাংসহ নানা অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

এ ক্যাম্পটি মহেশখালী থানার আওতাধীন, মহেশখালী থানার ইশারা ও নির্দেশনায় তার কর্মকাণ্ড   পরিচালিত হয়। 'বিচার', 'বিচারক' -এ শব্দগুলো বিচারর বিভাগীয় স্বাধিন শব্দ হলেও ক্যাম্পের কর্মকর্তা ও ক্যাম্প কেন্দ্রিক দালালরা এসব শব্দ হরহামেশা ব্যবহার করে সাধারণ ফরিয়াদিদের ধারাবাহিক ভাবে বোকা বানিয়ে চললেও এ সবে যেনো কারও নজরদারি নেই। এ যেনো অনৈতিক সুবিধার মোক্ষম হাতিয়ার।

এ বিষয়ে মহেশখালী থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. আব্দুল হাই এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে হয়, এর উপর ভিত্তি করে মামলা নেওয়া হয়। এ জন্য  কিছু কিছু বিষয়ে উভয়ের সাথে বসতে হয়।  কারও প্রভাবে রিপোর্ট দেওয়ার সুযোগ নেই। যদিও মাদক ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে। তারপরও যদি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।