জানা যায়, গত রবিবার বিকেলে পাহাড়ের কিনারায় খেলতে যায় কালারমার ছড়া ইউনিয়নের অফিসপাড়া এলাকার নজির হোসাইনের শিশু রবিউল, পরে খেলারত অবস্থায় পাহাড় ধসে মারা যায় শিশুটি। নিহত শিশুর পরিবার জানায়- বিকেল থেকে রবিউকে অনেক খুঁজাখুঁজির পর এক ভদ্রলোকের মাধ্যমে খবর পাই তুলাশিরা উত্তর পাশে পাহাড়ের কিনারায় খেলারত ছিল রবিউল, পরে সেখানে গেলে অপর এক শিশু জানায় রবিউলের ওপর পাহাড় ধসে পড়ে। এরপর স্থানিয়দের সাহায্য নিয়ে রবিউলকে মাটিচাপা অবস্থায় রবিউলের মরদেহ উদ্ধার করি। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকাজুড়ে শোকের মাতম তুলে সকলে। পরে স্থানিয় চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফ বিধ্বস্ত পরিবারকে নগদ টাকা সাহায্য করার আশ্বাস দেন।
এদিকে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী শত শত পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে উপজেলা প্রশাসন স্থানিয় জনপ্রতিনিধিরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু প্রবল ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও অনেকেই নিরাপদ স্থানে সরতে চাচ্ছেন না। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম মহেশখালীর সব খবরকে বলেন, মহেশখালী উপজেলার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে কালারমার ছড়া, শাপলাপুর ও ছোট মহেশখালী এলাকায়। এসব এলকায় শতাধিক পরিবার পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। তাদের নিরাপদ স্থানে সরানোর জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের অনুরোধকে কেউ কর্ণপাত করছেন না। ফলে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানিয় জনপ্রতিনিধিরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, তিনটি ভূতাত্ত্বিক কারণে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে থাকে। পাহাড়ের ভূতাত্ত্বিক গঠন, বালুর বিন্যাস এবং ঢালু পাহাড়ের কারণে প্রাকৃতিকভাবে পাহাড়ধস হয়। অপরদিকে পাহাড়ে চাষাবাদ এবং বন উজাড়ের মতো ঘটনা মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে প্রধান। অতিবৃষ্টিতে ফাটল দিয়ে পানি পাহাড়ের ভেতরে প্রবেশ করে। এতে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। পাহাড়ধস বন্ধ করতে হলে পাহাড়কাটা বন্ধ, পর্যাপ্ত গাছপালা লাগানোর পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন এবং পাহাড় থেকে বসতি উচ্ছেদ করা ছাড়া উপায় নেই। ভূতাত্ত্বিকদের মতে বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলের ওপরের দিকের মাটিতে কঠিন শিলার উপস্থিতি নেই। ফলে এখানে পাহাড় ধসের আশঙ্কা থাকাটাই স্বাভাবিক। তার ওপর নির্বিচারে পাহাড় কেটে বসতি গড়ে মহেশখালী অঞ্চলকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে।