'আকাশ বড় খোলামেলা
দিনের বেলা আলোর মেলা।
রাতের বেলা চাঁদের হাসি
তারা ভাসে রাশি রাশি।'
শিক্ষাজীবনের প্রথমার্ধেই বর্ণ, অক্ষর ও শব্দের সাথে শিশুর পরিচয় ঘটে। ধীর ধীরে তৈরি হতে থাকে তার মনোজগৎ। শিশুর চিন্তাশক্তি ও ভাবভঙ্গিতে আসে বহুধা পরিবর্তন। শিক্ষা জীবনের শুরুতেই যদি শিশুকে একটি ভালো বইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া যায়, তাহলে শিশু ক্রমশঃ আগ্রহী হয়ে উঠবে সুন্দর কিছু শেখার জন্য। শব্দের পিঠে শব্দ সাজিয়ে বাক্যের পথ তৈরি করতে শিখবে। এভাবে নিজেই বাক্য তৈরির কলকব্জা নির্মাণ করবে।
খেলনার মাধ্যমেও শিশুকে শিক্ষায় আগ্রহী করে তোলা যায়। শিশু শিক্ষার নানান উপকরণ এখন সহজলভ্য।
"মানুষ ভাষা শেখে, শোনে ও বলে, অঙ্গভঙ্গি, ইশারা, ইঙ্গিত, পড়ালেখা, কাথাবার্তা, আলাপ - আলোচনা, আঁকাআকি বা চিত্রলিপি ব্যবহারসহ বিভিন্ন আঙ্গিকে। ভাষা মনের ভাব প্রকাশে অতুলনীয় মাধ্যম। আমরা সাধারণত ভাষা শিখে থাকি কথা বলা, দেখা, শোনা আর লেখাপড়ার মাধ্যমে। পড়ালেখা চর্চার প্রাথমিক হাতিয়ার প্রত্যেক ভাষার বাক্য, শব্দ, আর অক্ষর শেখার ভিন্ন ভিন্ন বা সুসমন্বিত উপকরণ।"
'বর্ণের ছড়া ও বর্ণ পরিচয়' শিশুতোষ বইটি লিখেছেন শিক্ষাবিদ শাওয়াল খান। বইটি মে ২০২২ সালে আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে । বইটির অলংকরণ করেছেন এস এম রাকিবুর রহমান। বইটির শুভেচ্ছা মূল্য ৩০০টাকা। বইটির ভাষা ঋজু ও হৃদয়গ্রাহী। এ বইটি যে কোন বয়সের শিশুদের আনন্দ জোগাতে সহায়ক হবে। এ বইয়ে মুদ্রিত ছড়াগুলোর সুর ও ছন্দ ঝঙ্কার মনের গহীনে গেয়ে উঠবে সুদররের গান।
লেখায় বিভিন্ন প্রতীক ব্যাবহারের মাধ্যমে বাক্য গঠন করা হয়েছে, যা শিশুদের শুনতেও ভাল লাগবে।
"তাই শিশুকে সম্বোধন, শিশুর সাথে কথোপকথন, আদর-সম্ভাষণ শ্রুতিমধুর হওয়া বেশ ফলপ্রদ।তাই তো মানুষ শিশুর সাথে আলাপ জোড়াতে সুর আর ছন্দের খোঁজ করে। এই ক্ষেত্রে ছড়ার বিকল্প নেই। যে কোন শিশুতোষ বই শিশুর চিন্তাশক্তি প্রসারে সহায়ক। কারণ শিশুর চিন্তার সাথে মিলিয়ে সহজ ভাষায় লিখিত বই-ই শিশুতোষ বই। আর ছড়াই সকল শিশুতোষ বইয়ের জনক যা শিশুকে তার নিজস্ব জগতের সাথে আরও গভীরভাবে সম্পৃক্ত করে ছড়ার সুর ও ছন্দের জাদুকরী মায়ায়।"
লেখক স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণগুলোর পরিচয় সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় ছন্দবদ্ধ ছড়ার সাহায্যে দেয়া হয়েছে । এ ছড়াগুলো শিশুর চিন্তাশক্তিকে প্রবল ও গতিময় করবে। ছোট শিশুদের স্মৃতিশক্তি প্রকট। সাজানো ও গুছানো কোন কিছু যদি তারা পড়তে পারে তাতে তাদের স্মৃতিশক্তি যে বিকশিত হওয়ার পথ তৈরি হয়।। শিশুর চিন্তাশক্তি, স্মৃতিশক্তি ও মেধাশক্তি বিকাশে শিশুতোষ বইটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। শিশুদের মনে হাজারো প্রশ্ন জাগে। প্রশ্ন করতে করতে শিক্ষার পরিধি আরও বৃদ্ধি পায়।
"সবচেয়ে বড় কথা, শিশু - কিশোরদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করে, জানার আগ্রহ বাড়ায়। উদ্রেক ঘটে চিন্তাশক্তির। এককথায় খুলে যায় ভাবনার দুয়ার। এভাবেই ঘটে চিন্তাশক্তির বিকাশ ও স্মৃতিশক্তির উন্নয়ন।"
শিক্ষাবিদ শাওয়াল খান শিক্ষা, সংস্কৃতি ও নাগরিক অধিকার বিষয়ে বহু বছর ধরে গবেষণা করে আসছেন। শিক্ষার নানান বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে লিখেছেন। আনুষ্ঠানিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়ে তাঁর বহু প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ছড়া সাহিত্য ও কথাসাহিত্য রচনার পাশাপাশি শিশু শিক্ষা, শিশু শিক্ষার উপকরণ ও অব্যাহত শিক্ষা নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থ : শিক্ষাজগৎ (২০০৯, বাংলা একাডেমি), অক্টোপাস (বাংলা একাডেমি)। অনূদিত : রাঙাডোরা (বাংলা একাডেমি), মার্কিন সাম্রাজ্য পতনের পরে (২০০৯, রোদেলা), আফেন্দির বুলিগল্প ( ২০১৯, বাংলা একাডেমি)। সম্পাদিত গ্রন্থ : মাতৃবন্ধু এ এইচ এম নোমান(২০২২,প্রতিবুদ্ধিজীবী), মহেশখালি: উন্নয়ন, নীতি ও নিয়তি( যৌথভাবে, ২০১৯,প্রতিবুদ্ধিজীবী ।
'দোয়েল পাখি টাকার গায়ে
বসে আছে শক্ত পায়ে।
দোয়েল পাখির লেজটি খাড়া
যাবার নেই কোনই তাড়া।'
"শিশু -কিশোররা চিরসুন্দর, চির অম্লান, নিরলস এবং গতিময়। এ গতিময়তাই তাদের নিরন্তর শক্তির উৎস। বড়দের দায়িত্ব বিদ্যমান গতিময়তা কার্যকরভাবে সঠিকপথে প্রবাহিত হতে সহায়তা করা, অনুপ্রেরণা দেয়া, মনের আনন্দে বিচরণের ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়া। এ রকম সহায়তার কার্যকর উপায় শিশু -কিশোর মনে আনন্দ দেয় এমন শিক্ষা -উপকরণ বা পাঠ্যপুস্তক।" আমি বইটির ব্যাপক প্রচার ও সফলতা কামনা করছি।
লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।