Advertisement


এসপিএম প্রকল্পের কর্মকর্তা বলছেন বকেয়া বেতনের দাবিটা বৈধ হলে দ্রুত পাওনা শোধ করতে হবে

মহেশখালীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষ


মাহবুব রোকন, বিশেষ সংবাদদাতা ।। মহেশখালীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেছে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বেলা ১১টা থেকে শ্রমিকরা উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের সোনারপাড়া এলাকায় প্রকল্পের সামনে এ অবরোধে নামেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা প্রকল্পে কর্মরত দেশি-বিদেশি কর্মকর্তাদের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেন। পরে দ্রুত সময়ে সমস্যা সমাধান করার আশ্বাসে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন বকেয়া বেতনের দাবিটা বৈধ হলে দ্রুত পাওয়না শোধ করতে হবে।

জানা গেছে- আমদানি করা জ্বালানি তেল জাহাজ থেকে দ্রুত ও সাশ্রয়ীভাবে খালাস করার জন্য গভীর সমুদ্রে ডাবল পাইপলাইনের সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এই প্রকল্পের জন্য কালারমার ছড়া সোনারপাড়ায় স্টোরেজ ট্যাংক স্থাপন করা হয়। প্রকল্প নির্মাণের ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে ইতোমধ্যে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বকেয়া টাকার জন্য শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ।

আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, গত কয়েক মাস ধরে প্রায় শতাধিক শ্রমিকের বিভিন্ন মেয়াদে বেতন আটকে রাখা হয়েছে। বেতন চাইতে গিয়ে অনেক শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একাধিকবার বকেয়া বেতন সীট জমা করেও বেতন পায়নি তারা। তাই বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছে তারা।

এসপিএম প্রকল্পের সিটিএল কোম্পানিতে কর্মরত শ্রমিকরা জানান, বিগত পাঁচ মাস ধরে প্রায় ৮০-৯০ জন শ্রমিক নিয়ে রং, প্লাস্টার ও ফুটিং বাবদ কন্ট্রাক্টে কাজ করিয়ে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার বিল বকেয়া রেখেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। বারবার বকেয়া বিল জমা দিতে চাইলেও জমা নেননি উল্টো আমাদের  কাজ থেকে ছাঁটাই করে দিয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে শ্রমিকদের এক থেকে পাঁচ মাস পর্যন্ত বেতন বকেয়া রেখে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে শ্রমিকরা বেশ কষ্টে জীবনযাপন করছে।

অবরোধে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের স্পষ্ট অভিযোগ প্রকল্পের চায়না কর্মকর্তা মি. চ্যাং এর বিরুদ্ধে। আন্দোলনকারী এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেন এবং তিনিই শ্রমিকদের টাকা আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ করেন। শ্রমিকদের অভিযোগ তারা বেতনের দাবি জানালে তাদেরকে পুলিশের ভয় দেখানো হয়।

পরে মহেশখালী থানা পুলিশের একটি ইউনিট অবরোধ এলাকায় উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়ে কাজে ফিরেন।

এই বিষয়ে কালারমার ছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফ জানান, শ্রমিকদের বেতন বকেয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। দ্রুত সময়ে কর্তৃপক্ষের সাথে বসে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে আন্দোলনের খবরে ঘটনাস্থলে যান মহেশখালী থানার অফিসার ইন-চার্জ(ওসি) প্রনব চৌধুরী। তিনি জানান, শ্রমিকদের দাবির বিষয়টি দির্ঘদিনের। তাদের দাবির বিষয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে দ্রুত সময়ে তাদের পাওনা শোধ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। শ্রমিকদের এ বিষয়টি বোঝানোর পর তারা অবরোধ প্রত্যাহার করে কাজে ফিরেছেন।

এ বিষয়ে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ ইয়াছিন জানান- তিনি সরকারি কাজে ব্যস্ত ছিলেন, বিষয়টি ওসি দেখাশোনা করেছেন। মূলতঃ চায়না কর্মকর্তা মি. চ্যাং এর কারণে সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি শোনেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টির সার্বিক খোঁজখবর নেওয়া হবে বলে জানান ইউএনও।

সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) এন প্রকৌশলী শরীফুল ইসলাম সব খবরকে জানান- অবরোধের সময় তিনি ঘটনাস্থল থেকে দূরে ছিলেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন। শ্রমিকদের যদি বেতন বকেয়া থেকে থাকে, তাদের দাবি বৈধ হলে, তাদের কাছে তার প্রমাণপত্র থাকলে -তবে তাদের বেতন পরিশোধ করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।