Advertisement


একজন কোম্পানী কর্মকর্তা 'জিকু বিশ্বাস'র কাছে অসহায় ধলঘাটার ভূমি মালিক ও চাষিরা


ফুয়াদ মোহাম্মদ সবুজ,ধলঘাটা থেকে ফিরে ।। বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য সরকার নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে এদেশে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্প। কিন্তু সরকারের এ মহান উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে একটি মহল বরাবরই সক্রিয় ভুমিকা পালন করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যেমনটা মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলো রাজাকারদের ভুমিকা। তবে আমাদের এবারের অনুসন্ধান দেশ বিরুধি রাজাকারদের নিয়ে নয়, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার উপ-দ্বীপ ধলঘাটায় সরকারের নেয়া একটি অর্থনৈতিক প্রকল্প প্রকল্প এলাকা নিয়ে।

দেশের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এ উপদ্বীপটির নামই মূলত ধলঘাটা। ভূমির হিসেবে ধলঘাটা মৌজার মোট ৬৭০.৫৮ একর জায়গার ওপর বাস্তবায়িত হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ইকোনমিক জোন। অভিযোগ উঠেছে- এ মেগা প্রকল্প ঘিরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টি.কে গ্রুপের সহযোগী সংস্থা এসপিসিএলের এডমিন অফিসার জিকু বিশ্বাস অনৈতিক ভূমি বাণিজ্যের এখানকার ক্ষতিগ্রস্ত স্থানিয়দের সাথে নানা হয়রানিমূলক আচরণ করে আসছেন। একই সাথে এক সময়ের মূর্তিমান আতংক প্রাক্তন জলদস্যুরদের  সাথে আতাঁত করে তাদের কাছে সরকারি জমি কথিত জমি বর্গা দিয়ে আতংকের জনপদ সৃষ্টি করে চলেছে -শান্ত ধলঘাটাকে।

প্রথম পর্বের এ অনুসন্ধানে দেখবো অভিযোগের নানা দিক, জানার চেষ্টা করবো অভিযুক্ত সেই জিকু নিজের অবস্থানের পক্ষে কী বলছেন তাও।

জিকু বিশ্বাস। ধলঘাটাবাসীর জন্য এক আতঙ্কের নাম। যার অপকর্ম নিয়ে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমে একাধিক খবর বেরিয়েছে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান টি.কে গ্রুপের কর্মকর্তা বলে দাবি করা জিকু বিশ্বাস আসলে শিল্প প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী সংস্থা এসপিসিএলের সামান্য এডমিন অফিসার হিসেবে দায়িত্বরত। তবুও বড় কোম্পানির কর্মকর্তা পরিচয়ে ৪ বছরের চাকুরী জীবনে তিনি ধলঘাটায় প্রতিষ্ঠা করেছে এক অশুভ আধিপত্য। তৈরি করেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অভিযোগ রয়েছে- এসপিসিএলের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার আশ্রয়ে জিকু বিশ্বাস এ দ্বীপের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জিম্মি করে নানা ফায়দা লুটে বনে গেছে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক।

স্থানিয়দের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করতে আমাদের যাত্রা এবার ধলঘাটায়। সরজমিন ঘুরে দেখার পর কথা হলো স্থানীয়দের সাথে। কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত জমি মালিক আমাদের সাথে কথা বলতে চাইলেও জিকুর আতঙ্কে অনেকই ক্যামেরার সামনে আসতে রাজি হয়নি।

ধলঘাটার পন্ডিতের ডেইল নামক এলাকায় মোহাম্মদ আলী নামে বৃদ্ধা আমাদের সঙ্গে কথা বললেন জিকুর ভূমি বাণিজ্য নিয়ে।

আসন্ন দুর্ভিক্ষ রোধে যেখানে প্রধানমন্ত্রী ‘এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখতে অনুশাসন করেছেন সেখানে ধলঘাটা মৌজার শতশত একর অধিগ্রহণকৃত জমি টাকার বিনিময়ে স্থানিয় একটি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী সিন্ডিকেটকে বর্গা দিয়ে প্রান্তিক লবণ চাষিদের বঞ্চিত করে রেখেছেন জিকু বিশ্বাস নামে এ অসাধু কর্মকর্তা। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে দেশের গণমাধ্যম সংবাদ প্রচার হলেও ব্যবস্থা নেয়নি কতৃপক্ষ।

অনুসন্ধানের শুরুতে অভিযুক্ত জিকু বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হয় আমাদের। অনুসন্ধানের স্বার্থে প্রথম দিকে আমাদেরকে ধলঘাটায় সহজমিনে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেও সরজমিন পরবর্তী ক্যামেরার সামনে আসেনি জিকু। মুঠোফোনেও অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- তার বিরুদ্ধে স্থানিয়দের আনা অভিযোগ মিথ্যে। চিংড়ি ঘের করতে স্থানিয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটকে সরকারি জমি বর্গা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- চাষিদের লবণ চাষ করতে না দেওয়ার কারণেই এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন তারা।

দুর্যোগ -দুঃসময় মুকাবিলা করে ধলঘটায় দীর্ঘ দিনের জন্মমাটি আকড়ে থাকা স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বার্থ রক্ষায় সংশ্লিষ্টরা আরও উদার হবেন এমটি প্রত্যশা সকলের।