Advertisement


গরীব মেধাবী ছাত্রীর জন্য দেয়া এমপির উপহারের সাইকেল দেওয়া হলো প্রধান শিক্ষকের ছেলেকে


এস. এম. রুবেল।। বিদ্যালয়ের মূল্যয়ন পরীক্ষায় মেধাক্রমে পিছিয়ে থাকা নিজের ছেলেকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে দশম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছে বলে তথ্য গোপন করে পুরষ্কারের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে কুতুবজোম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদুল করিমের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ করেন ওই বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে দশম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থী সামিয়া সোলতানা সোমা। এক ভিডিও বার্তায় শিক্ষার্থী সোমা এ অভিযোগ করে।

জানা গেছে- বৃহষ্পতিবার (২৩মার্চ) ছিল কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ-সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। অনুষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীতে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ ৫শিক্ষার্থীকে বাইসাইকেল উপহার দেন প্রধান অতিথি। অনুষ্ঠানে দশম শ্রেণীতে সর্বোচ্চ নম্বর না পেয়েও তথ্য গোপনে রেখে প্রধান শিক্ষক মাহমুদুল করিম একই শ্রেণিতে পড়া তার ছেলেকে পুরস্কারের তালিকায় নাম দেন এবং সেই অনুযায়ী প্রধান অতিথির হাত থেকে সাইকেল গ্রহণ করে তার সন্তান। কিন্তু এতে বাদ পড়ে যায় প্রকৃত মেধাতালিকার এক নম্বরে থাকা ছাত্রী সামিয়া সোলতানা সোমা।

বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী সামিয়া সোলতানা সোমা জানায়- বিদায় অনুষ্ঠানের পুরোটা সময় সে উপস্থিত ছিল এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে মানপত্রও পাঠ করে সে। যখন মেধাবীদের বাইসাইকেল গ্রহণের জন্য তার স্কুলের শিক্ষক আবদুল হামিদ মাইকে নাম ঘোষণা করেন, তখন তার নামের স্থানে প্রধান শিক্ষকের ছেলের নাম ঘোষণা করা হয়। ওই ছাত্রী আরো বলেন- “সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার পরেও আজ এতিম, অসহায় ও গরীব বলে আমাকে সম্মাননা স্মারক বাইসাইকেল নিতে দেয়নি। আর প্রধান শিক্ষক স্যার আমার পরের অবস্থানে ওনার ছেলের অবস্থান হওয়া স্বত্বেও তাকেই সর্বোচ্চ নাম্বারধারী বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সম্মাননা স্মারক নেয়ার ব্যবস্থা করে দেন। আমার সাথে চরম বৈষম্য করা হয়েছে।”

এদিকে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজের ছেলেকে সাইকেল পাইয়ে দেয়ার ঘটনাটি জানাজানি হলে বিষয়টি নিয়ে সর্বমহলে নানান সমালোচনার সৃষ্টি হয়। আবদুল গফুর নামের একজন জানান- শিক্ষকরা সর্বদা সম্মানের পাত্র। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি করা কোন ভাবেই শিক্ষকদের কাজ নয়। একটি সামান্য সাইকেলের লোভ সামলাতে না পারা ব্যক্তি কিভাবে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হয় এবং ওই প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত।

অভিযোগের বিষয়ে কুতুবজোম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদুল করিম বলেন, “অনুষ্ঠানের দিন দশম শ্রেণীর ওই শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন না। তার পক্ষ হয়ে আমি পুরষ্কারটি গ্রহণ করে স্কুলে রেখে দিয়েছি। শিক্ষার্থীকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলবেন, সাইকেল দিয়ে দিবো।” ওই শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে থাকা স্বত্বেও আপনার ছেলে কিভাবে প্রধান অতিথির কাছ থেকে সাইকেল গ্রহণ করেছেন, সেই বিষয়ে জানতে চাইলে ওই প্রধান শিক্ষক এড়িয়ে যান।

এই ব্যাপারে মাধ্যমিক একাডেমিক সুপার ভাইজার ফজলুল করিম জানান, ঘটনাটি সম্পর্কে শুনেছেন এবং ওই বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বস্থ করেন।