Advertisement


মাতারবাড়িতে বাঁধ ভেঙে কৃষকদের স্বপ্নও তলিয়ে গেছে জোয়ারের পানিতে: অনিশ্চিত আমন চাষ


রকিয়ত উল্লাহ।। বৈরী আবহাওয়ায় সতর্ক সংকেতের পাশাপাশি সাগর উত্তাল রয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকজন দিন ধরে অমবশ্যা জোয়ার ও অতিবৃষ্টিতে সাগরের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। যার কারণে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ির পশ্চিমে বেড়িবাঁধে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ঢেউয়ের আঘাতে উপড়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, তলিয়ে যাচ্ছে জিওব্যাগ, তছনছ হচ্ছে বেড়িবাঁধ রাস্তা; হুমকির মুখে পড়েছে আমন ধানের চাষাবাদ।


সরেজমিন দেখা গেছে- ইউনিয়নের পশ্চিমের ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। এতে চারদিকে অথৈজলে তই তই করছে পানি। বেড়িবাঁধের পাশের বেশ কয়েকটি ঘরের ছাউনি ও বেড়ে ভেঙে চুরমার। কোথাও কোথাও ফসলি জমির পানিতে ভেসে উঠছে আমন ধানের চারা। অনেক স্থানে বোঝার উপায় নাই এটি আমন ক্ষেত। লবনাক্ত  জলাবদ্ধতার কারণে আমন ক্ষেতের এ দূরাবস্থা। এতে হতাশায় পড়েছেন উপজেলার মাতারবাড়ির প্রান্তিক কৃষকরা। জমিতে জলাবদ্ধতায় বীজতলার পাশাপাশি লাগানো আমন চারাও নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু কিছু আমন ক্ষেত লবনাক্ত পানিতে এখনও নিমজ্জিত রয়েছে। এতে মাতারবাড়ি ইউনিয়নের শতশত চাষির ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- মাতারবাড়ি ইউনিয়নের নয়া পাড়া, সাইট পাড়া, পশ্চিম তিতা মাঝির পাড়া, মিয়াজীর পাড়া, বলির পাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ বেড়িবাঁধের পাশে জোয়ারের পানির সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে বসবাস করে আসছেন। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে ঘরবাড়ি উপড়ে গেলেও অন্য কোথাও বসবাসের সুযোগ না থাকায় বেড়িবাঁধের পাশেই তারা বসবাস শুরু করেন।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে তড়িঘড়ি কর ভাঙা বেড়িবাঁধের অংশে জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করার কাজে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, এসব অভিযোগ তুলছেন খোদ এলাকাবাসীরা।

স্থানীয় কৃষক জমির উদ্দিন, বাদশা মিয়া, হেলাল, সোহেল বলেন- এবারের জোয়ারে জিও ব্যাগের উপর দিয়ে এবং বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে লোকালয়ে চলে এসে আমন ধান নষ্ট হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগও সঠিক নিয়মে বসাইনি। এর থেকে প্ররিত্রাণ পেতে একমাত্র সুপার ডাইক বেড়িবাঁধই প্রয়োজন। যেটি গত ২ বছর ধরে হবে হবে বললেও এখনো কাজ শুরু হয়নি। এটি বাস্তবায়ন হলে এখানকার ৮০ হাজার মানুষের স্বপ্ন পুরণ হবে৷

স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা- এনএইচএম. তৈয়ব  জানান- জোয়ারের পানি ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয় এবং জমিতে লবনাক্ত পানি প্রবেশ করে আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। চলতি মৌমুমে এসব ক্ষেতে আর কোনো ধানের চারা লাগানো সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।

মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হায়দার জানান- মাতারবাড়িতে ভাঙা বেড়িবাঁধের অংশে দিয়ে জোয়ারের পানিতে মানুষের ঘরবাড়ি ও কৃষি ফসল নষ্ট হচ্ছে। যদি প্রস্তাবিত সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ বাস্তবায়ন হয় তবো মাতারবাড়িবাসির দুঃখ দুর হবে।

এ বিষয়ে মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ-সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন- মাতারবাড়ি-ধলঘাট এলাকার জনগণকে শতভাগ সুরক্ষা দিতে কাজ করছে সরকার। মাতারবাড়ি ও ধলঘাটায় ১৭.৬৩ কিঃমিঃ সুপার ডাইক বেড়িবাঁধের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে কুতুবদিয়া ও মহেশখালীর প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

এদিকে এমপি তার ফেসবুক পেইজে লিখেছেন- "পূর্ণিমার অতিরিক্ত জোয়ারে মাতারবাড়ি ও কুতুবদিয়ার যে সমস্ত  বেড়িবাঁধ ও এলাকাগুলি প্লাবিত হয়েছে  আগামীকালকেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।"

সন্ধ্যায় সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে- পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও মহেশখালীর ইউএনওর নেতৃত্বে প্রশাসনের একটি দল মাতারবাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।