Advertisement


মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পে সাংবাদিক আটকিয়ে নির্যাতন, সাংবাদিকদের বিক্ষোভ

সিকিউরিটি অফিসার মশিউরকে প্রকল্প থেকে প্রত্যাহারের দাবি


নিজস্ব প্রতিবেদক, মাতারবাড়ি ।। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে একটি কোম্পানির অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সেনা কর্মকর্তা পরিচয়ে সাবেক এক কর্মকর্তা কর্তৃক সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে মাতারবাড়িতে বিক্ষোভ করে এ নিয়ে টানা আন্দোলন চলবে বলে জানান সাংবাদিকরা।

জানা গেছে- কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের অধিনস্থ সুমিতমো কোম্পানীর সিকিউরিটি অফিসার মশিউর মেজর পরিচয় দিয়ে জাতীয় দৈনিক কালবেলা ও কক্সবাজার থেকে দৈনন্দিনের মহেশখালী প্রতিনিধি রকিয়ত উল্লাহকে রাতের আন্ধকারে কৌশলে ডেকে নিয়ে গিয়ে কয়লা বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ প্রকল্পের স্টাফ কোয়ার্টার ও কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের ভিতরে আটকে রেখে গালিগালাজ, মারধোর ও হুমকির প্রতিবাদে  কক্সবাজার উপকূলীয় সাংবাদিক ফোরামের আয়োজনে বিশাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাংবাদিক রকিয়ত উল্লাহ এই কক্সবাজার উপকূলীয় সাংবাদিক ফোরামের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। মাতারবাড়িতে ওই বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাছে এ বিক্ষোভ কর্মসুচি পালন করেন সাংবাদিকরা।


২২ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বিকাল ৪ টায় কক্সবাজার উপকূলীয় সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি স ম ইকবাল বাহার চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সংগঠনটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর ছিদ্দিক এর সঞ্চালনায় মাতারবাড়ি সেতুর কাছে কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের নতুন সড়কে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

দীর্ঘ মানববন্ধন শেষে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় সাংবাদিক নেতারা প্রশ্ন রেখে বলেন- তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর, চাকরি করেন একটি বেসরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি অফিসার হিসাবে। ওই লোকটি কিভাবে বর্তমান মেজর দাবি করে একজন পেশাদার সাংবাদিককে মুঠোফোনে কল করে লোক পাঠিয়ে ও পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে পরেন এবং পরে তাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে তার স্টাফ কোয়ার্টারে গালিগালাজ, হত্যা ও গুম করার হুমকি দিতে পারেন? -তা আমাদের বোধগম্য নয়।
 
আন্দোলনরত সাংবাদিকরা আগামী ৪৮ ঘন্টার ভেতরে এই কথিত মেজর পরিচয়দানকারী সুমিতমোর সিকিউরিটি অফিসার মশিউরকে প্রকল্প থেকে অপসারণ না করলে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে হুশিয়ারি দেন। পাশাপাশি এই বিতর্কিত লোকের কারণে সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে উল্লেখ করে কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া ও তাকে মাতারবাড়ি তথা মহেশখালী থেকে প্রত্যাহার করার দাবি জানান।
মানববন্ধন উত্তর প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- কক্সবাজার উপকূলীয় সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি দৈনিক বায়ান্নর কক্সবাজার প্রতিনিধি স.ম ইকবাল বাহার চৌধুরী, সংবাদকর্মী মাহবুব রোকন, কক্সবাজার উপকূলীয় সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও মহেশখালী অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি, বিজয় টিভি ও দৈনিক পূর্বকোণের প্রতিনিধি হোবাইব সজীব, মহেশখালী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি দৈনিক আমার সংবাদ প্রতিনিধি মো. ইউনুস, পেকুয়া উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিজয় টিভি ও দৈনিক পূর্বদেশ প্রতিনিধি এম দিদারুল করিম, মহেশখালী উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ইরফান হোসাইন, মহেশখালী অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দৈনিক আজকের দেশ বিদেশ পত্রিকার প্রতিনিধি আবু বক্কর ছিদ্দিক, কক্সবাজার উপকূলীয় সাংবাদিক ফোরামের অর্থ সম্পাদক ও দৈনিক দৈনন্দিন পত্রিকার প্রতিনিধি আলাউদ্দিন আলো, মহেশখালী অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও এশিয়ান টিভির প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম সাইফ, দৈনিক কক্সবাজার এর উপকূলীয় প্রতিনিধি আল জাবের, টিটিএন এর মহেশখালী প্রতিনিধি কাব্য সৌরভ, যায়যায়দিন প্রতিনিধি ইঞ্জিনিয়র হাফিজুর ইসলাম, কক্সবাজার উপকূলীয় সাংবাদিক ফোরামের সদস্য ও সিবিএন প্রতিনিধি কফিল বিন আমির, মহেশখালী অনলাইন প্রেসক্লাবের নিবার্হী সদস্য এম কে রানা ও সদস্য ইমরান নাজির, দৈনিক আমাদের কক্সবাজারে প্রতিনিধি আকতার মিয়া, দৈনিক সংবাদ সারাবেলা প্রতিনিধি আলফাজ মামুন নুরীসহ অনেকই। 

মহেশখালীর মানুষের সংহতি:
এদিকে ওই স্থানে সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে মর্মে খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মাতারবাড়িসহ মহেশখালীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক বিক্ষুব্দ জনতা সংহতি জানিয়ে মানববন্ধনে শামিল হন। তাঁরা মহেশখালীতে চাকরি করতে এসে মেজর পরিচয়ি এই ব্যক্তি কর্তৃক মহেশখালীর সন্তানকে খুনের হুমকি দেওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং দ্রুতই এই ব্যক্তিকে মহেশখালী থেকে প্রত্যাহার করার দাবি জানান।

ঘোষণা:
সমাবেশ শেষে সংগঠনের সভাপতি স ম ইকবাল বাহার চৌধুরী -বিতর্কিত এই ব্যক্তিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে  মহেশখালী থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন। অন্যথায় আপামর মহেশখালীবাসীকে সাথে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানান।

সে দিন কি ঘটেছিলো?
প্রসঙ্গতঃ নির্যাতিত সাংবাদিক রকিয়ত উল্লাহ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশ করেন। খবরে বলা হয়- মাতারবাড়িতে স্থানীয় কয়েকজন জমি মালিকের কাছ থেকে জমি ভাড়া নিয়ে চুক্তি অনুযায়ী মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পে নিয়োজিত বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেকলিন কর্তৃক বিলের টাকা দেওয়ার হচ্ছে না। সাংবাদিকতার নিয়ম মেনে খবরে উভয় পক্ষের বক্তব্য নেওয়া হয়। খবর প্রকাশের পর রোববার দুপুরে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে ০১৭১৭-০৭৪৪১৭ নম্বর থেকে কল করে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয়ে একের পর এক হুমকি  দেন করতে থাকেন মশিউর রহমান নামের এক ব্যক্তি। এক পর্যায়ে তাকে তুলে আনা হবে বলেও উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি ভুল বোঝাবোঝি দাবি করে মঙ্গলবার রাতে নুর হোসেন সোহেল নামক এক ব্যক্তির মাধ্যমে সেটি অবসান করার কথা বলে সাংবাদিক রকিয়তকে সাইরার ডেইল তাদের কর্মচারীদের কোয়াটারে নিয়ে গিয়ে মশিউর রহমান অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের এক পর্যায়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। পরে তাকে একটি কালো গাড়িতে তুলে অজ্ঞাত স্থানের দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। এ সময় তাকে বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভেতরে টেকলিন নামের ওই কোম্পানির অফিসের সামনে নিয়ে গিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে আবারও অশ্লিল শব্দ ব্যবহার করে গালিগালাজ শুরু করার পর একটি কক্ষে নিয়ে যান। দীর্ঘ সময় ধরে তাকে ওই কক্ষে আটকে রেখে রকিয়তের হাত-পা কেটে সাগরে ভাসিয়া দেওয়ার পাশাপাশি আঙ্গুল কেটে কানে শিসা ঢুকে দেওয়ার হুমকি দেন।

পরে সাংবাদিকরা তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি  প্রকাশিত ওই খবরটি সত্য ছিলো বলে ইঙিত করে তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে মর্মে তথ্য দেন। তবে সাংবাদিক নিপীড়নের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি।
ঘটনা পরবর্তী উদ্যোগ:
এদিকে এ ঘটনার পর ঘটনার পর নিরাপত্তা চেয়ে মহেশখালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। বর্তমানে এটি তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে। এ বিষয়ে ভিকটিম সাংবাদিক রকিয়ত উল্লাহ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদকে নালিশ জানালে- এই মসিউর তাদের (বিদ্যুৎ কেন্দ্রের) কেউ নয় বলে জানান এবং তিনি এমন আচরণ করতে পারেন না উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দেন। মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীকি মারমার কাছে বিষয়টি জানানো হলে তিনি ওই সিকিউরিটি কর্মকর্তার এমন আচরণে বিষ্ময় প্রকাশ করেন। এ নিয়ে তার কাছেও একটি লিখিত অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। এদিকে এ ঘটনার পর মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ ও একটি স্মারকলিপি পাঠানো হয় ই-মেইলের মাধ্যমে। ভিকটিম সাংবাদিক রকিয়ত উল্লাহ'র পক্ষ থেকে কক্সবাজার-০২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ-সদস্য আশেক উল্লাহ রফিককে বিষয়টি সার্বিক ভাবে জানানো হয়। তিনি মহেশখালী থানা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দেন।