Advertisement


সারাদেশে জঙ্গি হামলার আশংকা

ঢাকাসহ সারা দেশে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা নিয়ে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিরা মাঠে নামার চেষ্টা করছে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। পুলিশের টিম, স্থাপনা ও যানবাহনকে হামলার লক্ষ্যবস্তু (টার্গেট) করা হয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দর, দূতাবাস, বিশেষ ব্যক্তি, মাজারকেন্দ্রিক মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ও হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। এমন তথ্য পাওয়ার পর র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দেশব্যাপী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। তবে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, বড় ধরনের কোনো হামলা চালানোর শক্তি-সামর্থ্য জঙ্গিদের নেই। 

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (অপারেশনস-১) সাইদ তারিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে- তথাকথিত আইএস আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে কথিত ‘বেঙ্গল উলায়াত’ ঘোষণা করতে পারে বলে গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনা করে জানা গেছে। এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সাধারণত বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমেই ‘বেঙ্গল উলায়াত’ ঘোষণা করা হয়। এ অবস্থায় আইএস’র অনুসারী নব্য জেএমবির সদস্যরা বোমা হামলার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে। এ নিয়ে ডিএমপি সদর দফতরে রোববার বিশেষ সভা হয়েছে। সভায় ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম সংশ্লিষ্টদের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। নির্দেশের পর পুলিশের সব ইউনিট নিজ নিজ অবস্থানে সতর্ক রয়েছে।

হামলার সময় কী ধরনের অস্ত্র থাকতে পারে সে বিষয়েও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব তথ্যের নিরিখে, পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটসহ জঙ্গিসংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া উগ্রপন্থী বা তাদের সংগঠনের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি, পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বজায় রাখা, পুলিশের গাড়ি-স্থাপনা খালি বা পরিত্যক্তভাবে ফেলে না রাখা, পুলিশের ভবনগুলোতে প্রবেশের সময় নিরাপত্তা ও পরিচয় নিশ্চিত করা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করা, চেকপোস্টে তল্লাশি বাড়ানো, সন্দেহ হলে ব্যাগ-দেহ তল্লাশি করা, সন্দেহজনক এলাকায় ব্লকরেইড করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, দিন-তারিখ না উল্লেখ থাকলেও চিঠিতে হামলার সময়কাল ধরা হয়েছে, সকাল ৬-৭টা অথবা সন্ধ্যা ৭-১০টা। হামলাকারীদের বয়স ১৫-৩০ বছরের মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চিঠিতে বলা হয়- সব ইউনিট প্রধানরা যেন এসব নির্দেশনা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেন। উগ্রপন্থীদের কার্যক্রম নিয়ে রোববার বিকাল ৩টায় নিজ কার্যালয়ে এক সভা ডাকেন ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম। সেখানে তিনি কর্মকর্তাদের এসব বিষয়ে নির্দেশনা দেন। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, দেশে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে দুর্বল। ঈদের আগে তারা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু বড় ধরনের হামলার সক্ষমতা জঙ্গিদের নেই। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, উৎসবের সময়ে জঙ্গিরা আগ্রাসী হয়ে ওঠে। তাই আমরা বাড়তি সতর্কতা নিয়ে রাখছি।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার ওয়ালিদ হোসেন বলেন, আমরা অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। ঈদ বা জাতীয় দিবসকে ঘিরে জঙ্গিরা টার্গেট করে। এ নিয়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য ইউনিটও কাজ করছে। এরই মধ্যে জনসমাগম এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। মন্দির-মসজিদ, গির্জায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। কাদিয়ানি ও শিয়া সম্প্রদায়ের উপাসনালয়গুলোতেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

র‌্যাব উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, জঙ্গি তৎপরতা মোকাবেলাসহ ঈদুল আজহায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। যে কোনো ধরনের জঙ্গি হামলা রুখে দিতে র‌্যাব সদাপ্রস্তুত। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার ঢাকার ধামরাই থেকে পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা- বড় ধরনের কোনো হামলা চালানোর শক্তি-সামর্থ্য জঙ্গিদের নেই। এ কারণেই হয়তো পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে টার্গেট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশের ওপর ছোট হামলা হলেই দেশে বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে দ্রুত ভীতি ছড়াবে। একই কারণে মাজার, মন্দির-মসজিদ-গির্জাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা চালানোর টার্গেট করতে পারে।

রাজধানীর পল্টনে শুক্রবার রাতে পুলিশ চেকপোস্টের খুব কাছে রহস্যজনক বোমা বিস্ফোরণের পর শনিবার গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে গ্রেনেডসদৃশ বস্তু উদ্ধার করা হয়। তদন্তের সঙ্গে যুক্ত গোয়েন্দারা জানান, দুটি ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে আতঙ্ক সৃষ্টিই মূল লক্ষ্য ছিল তা অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পাঁচ মাস আগে চট্টগ্রামে পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণে ট্রাফিক পুলিশের এক সার্জেন্টসহ পাঁচজন আহত হন। বিস্ফোরণের পরদিন হামলার দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট (আইএস) বার্তা দেয়। এর আগে গত বছরের এপ্রিল, মে ও আগস্টে ঢাকা মহানগরীতে পুলিশের ওপর তিনটি হামলার ঘটনা ঘটে। তাই শুক্র ও শনিবারের ঘটনার সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা নেই এমন কথা বলা যায় না। ডিএমপি সূত্র জানায়, পল্টন ও গুলিস্তানের ঘটনা দুটি ছোট হলেও তারা যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, পল্টনে বোমা বিস্ফোরণ এবং গুলিস্তানে গ্রেনেডসদৃশ বস্তু ফেলে রেখে আতঙ্ক সৃষ্টির নেপথ্যে উগ্রপন্থী নাকি রাজনৈতিক সন্ত্রাসীরা জড়িত তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ঘটনা যেটাই ঘটুক না কেন, পুলিশকে আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি সোহেল রানা যুগান্তরকে বলেন, জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে। তবুও জনগণের সর্বোচ্চ সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ন্যূনতম কোনো আশঙ্কার সুযোগ আমরা রাখতে চাই না।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার ওয়ালিদ হোসেন বলেন, আমরা অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। ঈদ বা জাতীয় দিবসকে ঘিরে জঙ্গিরা সব সময় টার্গেট করে। এ কারণে বিভিন্ন স্থানে ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গরুর হাট ও জনসমাগম এলাকায়ও বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত চেকপোস্টও স্থাপন করা হয়েছে।