Advertisement


মহেশখালীতে যুবলীগ নেতার ইয়াবা ব্যবসা !

সম্প্রতি দুলাভাই সালাহ উদ্দিনের নাম উঠে এসেছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়েরে তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি হিসাবে। এবার সে পথেই পা বাড়ালো তারা শ্যালক কিবরিয়াও।

কর্মিরা যে নেতাকে সম্মান করে ডাকতো কিবরিয়া ভাই। তাদের সেই কিবরিয়া ভাই নাকি এখন ইয়াবার ডিলার! তার পুরো নাম কিবরিয়া সিকদার। কুতুবজোম ইউনিয়ন যুবলীগের এই সভাপতি মহেশখালী থানায় সম্প্রতি রেকর্ড হওয়া মামলার মামলার ৭ নম্বর আসামি। তাকে গ্রেফতার এবং ইয়াবা উদ্ধারে পুলিশ এখন মরিয়া। অন্যদিকে কিবরিয়ার ঘনিষ্ঠদের কেউ কেউ বলছেন, কিবরিয়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তিনি ইয়াবা ব্যবসায়ী নন। সে একজন প্রকৃত চিংড়ী ব্যবসায়ী। রাজনীতির মারপ্যাঁচে হয়তো আজ ইয়াবা মামলার আসামি বনে গেছেন। বিস্তারিত
জিকির উল্লাহ জিকু ও এম বশির উল্লাহর প্রতিবেদনে।

যেভাবে বেরিয়ে এলো ডিলার রহস্য::
চলতি মাসের ৫ জুলাই। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বড় মহেশখালী ইউনিয়নের (৮নং ওয়ার্ডের) পূর্ব ফকিরা ঘোনার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় মহেশখালী থানা পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রানুযায়ী -পুলিশের অভিযান টের পেয়ে তিন চারজন লোক পালিয়ে যায়। গিয়াস উদ্দিনের নির্মাণাধীন বাড়ির দক্ষিণ কক্ষ থেকে ফাতেমা বেগম, গিয়াস উদ্দিন ও আমানুল করিমকে আটক করে পুলিশ। ইয়াবা ব্যবসায়ী ফাতেমা, গিয়াস উদ্দিন ও আমানুল করিমকে তল্লাসি করে মাদক বিক্রির ১৪,৩৪০ টাকাসহ মোট ৮৩০ পিস ইয়াবা এবং ৫০ পুরিয়া গাঁজা জব্দ করে পুলিশ। উদ্ধারকৃত ইয়াবাগুলো এ্যামফিটামিন সমৃদ্ধ বলে উল্লেখ করা হয়।

পরে গ্রেফতারকৃত তিনজন আসামি সাক্ষীদের সম্মুখে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি দেয়। পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা হলো- কুতুবজোম দৈলার পাড়া ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত মৌলভী মুহিবুল্লাহ পুত্র শান্ত ওরফে কালা মুন, হাজী জালাল আহমদের পুত্র সালাহ উদ্দিন (পুটিবিলার আওয়ামী লীগ নেতা আবু বক্কর হত্যার প্রধান আসামী) ও আলোচিত এই কিবরিয়া সিকদার। তাদের সবার বাড়ি একই এলাকায় দৈলারপাড়ায়। এজাহারানুযায়ী ধৃত ব্যক্তিরা তথ্য দেয় -পালিয়ে যাওয়া ওই তিনজন এবং এরা স্থানীয় ইয়াবার ডিলার। আবদু শুক্কুরের পুত্র আমান উল্লাহ হচ্ছে এজেন্ট।

কুতুবজোম ইউনিয়নের যুবলীগের অনেকের সাথে কথা হলে  জানান, কিবরিয়া বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত। তার এই জীবন যাপন এলাকার অনেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের মতে এখন মন্তব্য করার সময় শেষ। যাইহোক তদন্তে প্রমাণিত হবে সে ইয়াবার ডিলার নাকি নির্দোষ।

পুলিশের এজাহারের ভাষ্যানুযায়ী, আসামীদের স্বীকারোক্তি মতে, পাইকারি ধরে বিক্রি করা ব্যক্তিরা হচ্ছে শান্ত ওরফে কালা মনু, সালাহ উদ্দিন, ও কিবরিয়া সিকদার। ক্রয় করা ইয়াবা খুচরাও বিক্রয় করে থাকে। পালিয়ে যাওয়ার সময় ওই তিনজন ব্যক্তির নিকট আরো বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেট ছিল বলে জবানবন্দি দেয়। তারা পুলিশকে আরো জানান, পালিয়ে যাওয়ার সময় হুড়োহুড়ি করে তাহাদের দখলে থাকা উদ্ধারকৃত তিন প্যাকেট ইয়াবা ফেলে অবশিষ্ট ইয়াবা গুলো সঙ্গে নিয়ে পালিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃতদের ভাষ্যমতে, পালিয়ে যাওয়া তিনজনই ইয়াবার ডিলার। আমান উল্লাহ এজেন্ট।

যুবলীগ নেতারা যা বললেন::
সাজেদুল করিম। যিনি মহেশখালী উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক। তিনি বলেন -পুলিশের অভিযান সম্পর্কে জানেন না কিন্তু তার রাজনৈতিক সহকর্মী কুতুবজোম ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি কিবরিয়া সিকদার যে মাদকদ্রব্য মামলার আসামী তিনি তাও জানেন না। কেন জানেন না এবং সাংগঠনিক কি ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি এর উত্তর এড়িয়ে যান। সবশেষে বলেন, খোঁজখবর নিয়ে যদি ঘটনা সত্যি হয় তাহলে ঊর্ধ্বতন নেতাদের সাথে আলাপ করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সোহেল আহমদ বাহাদুর কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি। তিনি বলেন -মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি কিবরিয়া সিকদারের মাদক (ইয়াবা) বিক্রির সম্পৃক্ততা এবং মামলার বিষয়ে উপজেলা নেতৃবৃন্দ রিপোর্ট করেননি। তারপরও সংগঠনের স্বার্থে ঘটনার সাংগঠনিক তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিবেন। যাতে সরকার এবং পার্টির ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ থাকে।

মোহাম্মদ শহীদুল হক সোহেল কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি কিবরিয়া সিকদারের মাদক (ইয়াবা) বিক্রির সম্পৃক্ততা এবং মামলার বিষয়ে জানারপর খোঁজখবর নিতে গিয়ে বিভিন্নজন তাঁকে বলেছেন, কিবরিয়া মূলতঃ রাজনৈতিক সরলতার শিকার। তাঁর বাড়ি দৈলারপাড়ায় আর ঘটনাস্থল বড় মহেশখালী। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, পার্টিতে গ্রুপিং, স্থানীয় ভোটের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। মি. সোহেল বলেন -তারা অর্থাৎ জেলা যুবলীগ কমিটি নির্বাচিত হওয়ার আগেই কুতুবজোম ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তারপরও সংগঠন, সমাজ ও দেশের স্বার্থে এই সমাজ ধংসকারী ইয়াবা ব্যবসায় কিবরিয়া জড়িত থাকলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে দ্রুত।

পুলিশ যা বলছে::
মামলার তদন্তকর্মকর্তা এসআই আনিস উদ্দিন বলেন -অভিযানের পর সাক্ষী, আলামত এবং আসামীদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক জনস্বার্থে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধিন আছে। পাশাপাশি অন্য আসামীদের গ্রেফতারের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত আছে।

মহেশখালীর থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) দিদারুল ফেরদৌস সহযোগিতার আহবান করে বলেন, সারাদেশে মাদকের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছে। মহেশখালী উপজেলায়ও তা অব্যাহত থাকবে। যেকোনো প্রকার মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং চলবে। এবং মাদক ব্যবসায়ীদের সাম্রাজ্য তছনছ করে দেয়া হবে -সে যে দলেরই হোক।