Advertisement


সলিল সমাধি আর কতো ?


অসীম দাশ।।

সলিল সমাধি ব্যাকরণের বই থেকে যেন বিভীষিকা হয়ে ক্রমশ বাইরে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। যে কারণে প্রায়শই দেখতে হচ্ছে নৌপথে মৃত্যুর দুর্ঘটনা। এখনও পুরোপুরি থামানো যায়নি মহেশখালী-কক্সবাজার  নৌ পথের অব্যবস্থাপনা। চালকের অদক্ষতাজনিত কারণসহ বিবিধ কারণে একের পর এক গুণতে হচ্ছে এ সকল অকাল মৃত্যুর ঘটনা। 

গত ২০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুট পারাপারের সময় ফিশিংবোটের ধাক্কায় গামবোট থেকে নিচে পড়েগিয়ে নিখোঁজ হন কলেজ ছাত্র তোফায়েল মাহমুদ। 

পুলিশ জানায়, মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের সিপাহীর পাড়া গ্রামের নাগু মিয়ার পুত্র ও চট্টগ্রাম কলেজের অনার্স পড়ুয়া ছাত্র তোফায়েল শনিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের ৬নং জেটিঘাট থেকে গামবোট করে মহেশখালী যাচ্ছিলেন। এ সময় ৩৮ যাত্রী নিয়ে গামবোটটি বাঁকখালীর মোহনায় পৌঁছলে অন্যদিক থেকে আসা একটি ফিশিংবোট গামবোটে ধাক্কা দেয়। এ সময় তিন যাত্রী বাঁকখালী নদীতে পড়ে যায়। বোটের মাঝিসহ অপর যাত্রীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে ২ জন যাত্রীকে উদ্ধার করতে পারলেও তোফায়েল নিখোঁজ হয়। একপর্যায়ে দুদিন পর সোনাদিয়ার চরে তোফায়েলের লাশ ভেসে ওঠে।

শুধু তোফায়েল নয়; এই নৌপথে আমরা হারিয়েছে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার বর্তমান সাংসদ আলহ্বাজ আশেক উল্লাহ রফিক’র পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এডভোকেট এস.এ.এম রফিক উল্লাহ’কে। ১৯৮৪ সালের ৬ মে এক নৌ দুর্ঘটনায় আমরা এই নেতাকে হারাই। এছাড়াও এ নৌপথে সলিল সমাধি হয়েছে মো আব্বাস, আনচারুল করিম, নাহিদ,সিরাজ ও আনিসের মত আরও অনেকের।

সম্প্রতি নৌ দুর্ঘটনায় নিহত তোফায়েলের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন জেলা প্রশাসক। দিয়েছেন আর্থিক সহায়তাও। এদিকে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও কথা দিয়ে এসেছেন তার পরিবারকে একটি ঘর করে দেওয়ার। তবে আমরা মনে করি জীবনের বিপরীতে তা অপ্রতুলই।

অন্যদিকে তোফায়েলের মৃত্যুর পর আবারো সামনে এসেছে কক্সবাজার-মহেশখালী সংযোগ সেতুর দাবিটি। এ নিয়ে সেতু চাই আন্দোলন নামের একটি প্ল্যাটফর্মে সামিল হয়েছেন দ্বীপ জনপদের সব শ্রেণি পেশার মানুষ। সেতুর দাবীতে তাদের মানববন্ধন-পথসভাও করতে দেখেছি আমরা। একই দাবিতে মানববন্ধন করতে দেখেছি তোফায়েলে সহপাঠীদেরও । সেতুর দাবিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিতে দেখেছে ছাত্র-সাংবাদিক বন্ধুদের। আমরা চাই মহেশখালীর মানুষের এই প্রাণের দাবি দ্রুতই কর্তৃপক্ষ আমলে নিবেন। নেওয়া হোক এই সলিল সমাধি স্থায়ীভাবে বন্ধের উদ্যোগ । দূর করা হোক এই নৌপথের অব্যবস্থাপনা। নিশ্চিত করা হোক নিরাপদ নৌযাত্রা। দুর্ঘটনার নামে এমন মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়। দ্রুত সেতু নির্মাণের ঘোষণা আসুক সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে। এ সময় এটি মহেশখালীর প্রায়সব মানুষের প্রধান প্রত্যাশা। আমরা আশা করছি সংশ্লিষ্টদের কাছে মানুষের এ আবেগ গুরুত্ব পাবে। 

অসীম দাশ সহ-সম্পাদক, মহেশখালীর সব খবর এবং তরুণ সংগঠক ও বিতার্কিক।