Advertisement


ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি, সহিংসতার আশঙ্কা


যুগান্তর।। প্রথম ধাপের ৩৭১ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ১ হাজার ৭৫২ জন। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৯ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী।

তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী। বাকি ৬৫৩ জন আওয়ামী লীগসহ ১১টি রাজনৈতিক দলের মনোনীত। বিএনপিসহ নিবন্ধিত বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেয়নি।

তবে বিএনপির অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে কোনো কোনো স্থানে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

এছাড়া ২৭টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে একজন করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের পথে রয়েছেন। এ নির্বাচনে সবমিলিয়ে ২০ হাজার ৪৯০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

চেয়ারম্যান ছাড়া সাধারণ সদস্য পদে (মেম্বার) ১৪ হাজার ৪৩৫ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৪ হাজার ৩০৩ জন প্রার্থী হন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

১১ এপ্রিল প্রথম ধাপের এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইসি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, যে ২৭টি ইউনিয়নে একক প্রার্থী রয়েছে সেগুলো বাদে বাকি ৩৪৪টিতে গড়ে ৫ জনের বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এর মধ্যে গড়ে তিনজনের বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নে সর্বোচ্চ ১৫ জন চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। এ নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রতীকে অংশ না নেয়ার ঘোষণায় সরকারি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে।

আবার অনেক ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় প্রতীক ছাড়াই স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এতেও নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা বেড়েছে।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, শনিবার মনোনয়পত্র যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এরপর বাতিল বা বৈধ ঘোষণা করা মনোনয়নপত্রের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে।

এসব নিষ্পত্তি এবং ২৪ মার্চ প্রত্যাহারের শেষ তারিখের পর প্রার্থির সংখ্যা কিছুটা কমে আসবে। তবে তারা জানান, ২০১৬ সালের ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের ৭৩৮ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর চেয়ে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীর সংখ্যা বেশি ছিল।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ ১৬টি রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৯০০ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন ১৬৬৮জন।

এবার প্রতিটি ইউনিয়নে গড়ে তিন জনের বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, যা ওই নির্বাচনে ছিল দুই দশমিক ৫৭ শতাংশ। তবুও প্রথম ধাপের ভোটের দিন সহিংসতায় ১১ জন নিহত হন।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন অনেকটা ‘জোর যার মুল্লুক তার’ পর্যায়ে চলে গেছে।

যেহেতু বিরোধী দলের সাংগঠনিক শক্তি নেই, অর্থ নেই, দলও অগোছালো। সেই সুযোগে তৃণমূলের এ নির্বাচনে অনেক জায়গায় মন্ত্রী ও এমপিরা তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের দলীয় মনোনয়ন দেয়ার চেষ্টা করেন।

তখন মনোনয়নবঞ্চিতরা প্রার্থী হচ্ছেন। তারা সবাই সরকারি দলের হওয়ায় নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে চেষ্টা করেন। এ কারণে সহিংসতা হচ্ছে, সামনের নির্বাচনেও সেই শঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা হলেও ইসি কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। নির্বাচনে তাদের নিয়ন্ত্রণ দেখা যাচ্ছে না। এতেও সংঘাত বাড়ছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম।

তিনি যুগান্তরকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সব সময় চ্যালেঞ্জের। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলছে, এ নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সেজন্য নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বেশি থাকলে অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচন ভালো হয়, সেই নজিরও রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে।

এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মতিয়ার রহমানের পাশাপাশি একই দলের আরও তিনজন বিদ্রোহী হিসাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। অপরদিকে বিএনপিরও তিনজন এ ইউপিতে স্বতন্ত্র হিসাবে প্রার্থী হয়েছেন।

একইভাবে জামায়াতে ইসলামীর নেতা মো. শাহ আলমও প্রার্থী হয়েছেন। বাকি দুই জন স্বতন্ত্র ও একজন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী।

বরগুনার গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ১১ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছাড়াও দলটির আরও ৫ জন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন এই ইউপিতে।

স্থানীয় বিএনপির একজন নেতাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একজন, এ দলটির একজন বিদ্রোহী এবং বাকি দুই জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। 

এছাড়া কক্সবাজারের টেকনাফে ১২ জন, মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে ১২ জন, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর ফলকন ও হাজিরহাটে ১০ জন করে, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাঁশকান্দিতে ১৪ জন, একই উপজেলার দত্তপাড়ায় ১০ জন এবং বরগুনার পাথরঘাটার কাঁকচিড়া ও কাঁঠালতলী এবং আমতলীর চাওড়া ও আরপাঙ্গাশিয়াতে ১০ জন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

বাকি ইউনিয়নগুলোতে ২ থেকে ৯ জন প্রার্থী রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে কয়েকটি স্থানে সহিংসতা হয়েছে। সর্বশেষ বাগেরহাটের সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়ন সহিংসতায় শিশুসহ দশ জন আহত হয়েছেন। 

এদিকে বরিশাল ব্যুরো জানিয়েছে, বরিশালের হিজলা উপজেলার ইউপি নির্বাচনে ৪ ইউনিয়নের সবকটিতে আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। 

১নং হরিনাথপুর ইউনিয়নে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল লতিফ।

বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুর রহমান ও ইউনিয়ন আ.লীগের সাবেক সভাপতি ফারুক ইসলাম।

এই ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হয়েছেন আব্বাস সিকদার। ২নং মেমানিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী ইউনিয়ন আ.লীগের সম্পাদক মো. ওলিউদ্দিনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রার্থী হিসাবে বৈধ হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন। এছাড়াও আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বাবুল কাজী, দিদারুল ইসলাম, বারেক হোসেন ও দেলোয়ার হোসেন।

এ ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হয়েছেন মোসলেম উদ্দিন খান। 

৩নং গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন শাহজাহান তালুকদার। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। এছাড়াও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তালাৎ মাহমুদ নিপু সিকদার, কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী স্বপন ও উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক মুন্সি মো. এসহাক।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন মিজানুর রহমান। ৪নং বড়জালিয়া ইউনিয়নে আ.লীগের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন আলহাজ মো. এনায়েত হোসেন হাওলাদার।

তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। এ ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দাখিল করেছে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পণ্ডিত শাহাবুদ্দিন আহমেদ এবং উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সার্জেন্ট (অব.) মো. হাফিজুর রহমান।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন বৈধ হয়েছে মোহাম্মদ আবদুল্লাহের।

MR-02/20032021/UP-01