Advertisement


সোনাদিয়ায় ভয়ঙ্কর কারবারি এরা

মিয়ানমার থেকে আনা হত আইস। জেলে ছদ্মবেশে সংগ্রহ করা হত মাদকের চালান।


বার্তা পরিবেশক।।
লবণ ব্যবসার আড়ালে আইসের কারবার চক্রের হোতা মো. জসিম উদ্দিন ওরফে জসিম (৩২)। মিয়ানমার থেকে সোনাদিয়া হয়ে তার লবণের আড়তের আড়ালে আইস মজুদ করে রাখতো সে। পরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সিডাকটিভ এ মাদক ছড়িয়ে দিত এ চক্রের সদস্যরা। ভোরের কাগজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে -জেলের বেশে মাদকের চালান সংগ্রহ করা হতো। আর সংকেত হিসেবে টর্চের লাল ও সবুজ আলো ব্যবহার করতো তারা।

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে সিডাকটিভ মাদক আইস-ক্রিস্টালমেথের সর্ববৃহৎ চালান ১২ কেজি আইস ও ১ লাখ পিস ইয়াবাসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

আমাদের ওয়েবসাইটের উন্নয়ন কাজ চলছে, সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত! বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মঈন বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর শুন্য সহিষ্ণু নীতি অনুসরণ করে কাজ করছে র‍্যাব।

এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে সদরদপ্তর গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় র‌্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে আইস কারবারের অন্যতম হোতা মো. জসিম উদ্দিন ওরফে জসিম ছাড়াও তার সহযোগী মকসুদ মিয়া (২৯), মো. রিয়াজ উদ্দিন (২৩), শাহিন আলম (২৮) ও মো. সামছুল আলমকে (৩৫) আটক করতে সক্ষম হয়।

এ সময় গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের ১২ কেজি আইস-ক্রিস্টাল মেথ, ১ লাখ পিস ইয়াবা, ৪ হাজার ৬০০ পিস চেতনানাশক মাদক সিডাকটিভ ইনজেকশন, ২টি বিদেশী পিস্তল, ৯ রাউন্ড গোলাবারুদ, ২টি টর্চলাইট, বার্মিজ সিমকার্ড, ১ লাখ ৬৪ হাজার বাংলাদেশী টাকা, ১ লাখ বার্মিজ মুদ্রা ও ৫টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।


প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃতরা মিয়ানমারের মাদক চক্রের যোগসাজসে দেশে অবৈধ আইস কারবারের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশে গ্রেপ্তারকৃত জসিমের নেতৃত্বে মাদক সিন্ডিকেটের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। দেশে উক্ত চক্রের সদস্য সংখ্যা ১২+১৫ জন। এই চক্রটি মূলত সোনাদিয়া কেন্দ্রিক একটি মাদক চোরাকারবারী চক্র।

আমাদের ওয়েবসাইটের উন্নয়ন কাজ চলছে, সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত! ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও বরিশাল ইত্যাদি এলাকায় বিভিন্ন কৌশলে মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসা অবৈধ মাদক ক্রিস্টাল আইস এবং ইয়াবা পৌছাত। তারা মূলত নৌপথ ব্যবহার করে বিভিন্ন কৌশলে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে মাদক নিয়ে আসত। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রতিক সময়ে তারা নৌপথকে প্রাধান্য দিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মাদক সরবরাহ করত।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, এই চক্রের সদস্যরা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ক্রিস্টাল আইস ও ইয়াবা সাগর পথে পাচার করে আসছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণে গভীর সমুদ্রে ট্রলারের মাধ্যমে মিয়ানমারের মাদক চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশের এই চক্রের কাছে ইয়াবা ও আইসের চালান হস্তান্তর করে। সাগর পথে মাদকের চালান গ্রহণ ও নিরাপদ স্থলে পৌঁছানোর জন্য এ চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ২০-২৫ দিন জেলেদের ছদ্মবেশ নিয়ে গভীর সমুদ্রে অবস্থান করে থাকে। মালামাল গ্রহণের পর সুবিধাজনক সময়ে তারা সোনাদিয়া দ্বীপে চলে আসে।

অতঃপর বহনকৃত ইয়াবা ও আইসের চালান সোনাদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা হয়। এরপর সুবিধাজনক সময়ে চক্রটি সোনাদিয়া হতে দুইটি বোটের মাধ্যমে নোয়াখালীর হাতিয়াতে ক্রিস্টাল আইস ও ইয়াবার চালান নিয়ে আসত। এভাবে বহনকৃত মাদকের চালান হাতিয়ায় পৌঁছালে চক্রটির হাতিয়ার সদস্যদের তত্ত্বাবধানে মাদকের চালান সংরক্ষণ করা হয়। অতঃপর পুনরায় ইঞ্জিন চালিত নৌকায় মেঘনা নদী হয়ে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া-ঢাকার আশেপাশে অথবা সুবধিাজনক স্থানে পৌঁছাত।

ঢাকা ছাড়াও এরা বরিশাল,পটুয়াখালী ইত্যাদি অঞ্চলে মাদক সরবরাহ করতো। মাদকের চালান মুন্সিগঞ্জে পৌঁছানোর পর রাজধানীর একটি চক্র আইস ও ইয়াবার চালান গ্রহণ করে ও সড়কপথে বিভিন্ন মাধ্যমে কৌশলে মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে।

উল্লেখ্য, নৌপথে মাদক পরিবহনে তারা বিভিন্ন নিরাপত্তা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দেয়ার জন্য চক্রটি ২টি বোট ব্যবহার করে। সামনের বোটটিকে নজরদারী করতে ব্যবহার করত ও পরের বোটটিতে মাদক বহন করা হতো। মোবাইল অথবা টর্চ লাইট সিগন্যালের মাধ্যমে উভয় বোটের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করত। পথিমধ্যে নজরদারীতে নিয়োজিত স্কর্ট বোট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মুখীন/সন্দেহজনক কিছু আঁচ করতে পারলে পিছনের মাদকবাহী বোটকে সংকেত প্রদান করত।

আমাদের ওয়েবসাইটের উন্নয়ন কাজ চলছে, সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত! কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তাররকৃত জসিম ৫/৭ বছর যাবত মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত। সে লবণ ব্যবসার আড়ালে আইসের কারবারে জড়িত। সে মূলত মিয়ানমারের মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করত। জসিমের নেতৃত্বে চক্রটি প্রথমে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা নিয়ে আসতো পরবর্তীতে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ক্রিস্টাল আইসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছর থেকে তারা মিয়ানমার থেকে ক্রিস্টাল আইস নিয়ে আসাও শুরু করে। জসিম রাজধানী থেকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের চেতনানাশক মাদক সিডাকটিভ ইনজেকশন সংগ্রহ করে নৌপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতো।

গ্রেপ্তারকৃত শাহীন আলম জসিমের অন্যতম প্রধান সহযোগী। সে সাগর ও নৌপথে মাদক পরিবহনের মূল দায়িত্ব পালন করে। তার বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় মানব পাচার ও মারামারি সংক্রান্ত ২টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত অপর সদস্য শামছুল আলমেত বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় অস্ত্র ও মারামারি সংক্রান্ত ৩টি মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত মকসুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ডাকাতি সংক্রান্ত ৬টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত শাহীন, সামসু ও মকসুদ মাদক বহন ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করত। আর রিয়াজ উদ্দিন মাদক পরিবহনে নজরদারীর জন্য স্কর্ট বোটে অবস্থান করত ও স্কর্টিং এর দায়িত্ব পালন করে থাকত। গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।