Advertisement


আজ ২১ আগস্ট, গ্রেনেড হামলা ১৮ বছর

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের নেপথ্য নায়ক জেনারেল জিয়াউর রহমান, ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার নেপথ্য নায়ক তারই পুত্র তারেক রহমান


সৈয়দুল কাদের

আজ সেই কলঙ্কময় দিন ভয়াল ২১ শে আগষ্ট। এই দিনেই ৭৫ এর ঘাতকদের সহযোগিরা
জাতির জনকের বড় কন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে নিচ্ছিন্ন
করার মিশনে নেমেছিল। আল্লাহ সহায় থাকায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও হারিয়েছেন ২৪ জন
নেতাকর্মীকে। ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ডের পর ২১ আগষ্ট
ছিল ঘাতকদের বড় মিশন।  আজকের এই দিনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে
বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাসহ পুরো আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে
পরিচালিত হয় এই ভয়াল গ্রেনেড হামলা। ঘটনাটি দেখতে দেখতে ১৮টি বছর পেরিয়ে
গেছে ইতোমধ্যেই। কিন্তু ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার  ভয়াল স্মৃতি এখনো
তাড়িত করে আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মীকে। সেই হামলায় যারা আগত হয়েছেন
তাঁরা জীবিত থেকেও যেন মৃত। ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট জাতির জনককে হত্যার মাধ্যমে
ষড়যন্ত্রকারীরা যে রক্তগঙ্গা বয়ে দেওয়ার রাজনীতি শুরু করেছিল তারই
ধারাবাহিকতায় ২১ আগষ্টের ভয়াবহ হামলা। ৭৫ এর ১৫ আগষ্টের ঘাতকদের বাঁচাতে
যেমন ইনডেমনিটি হয়েছিল একই কায়দায় ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট ঘটনার জন্য সাজানো
হয়েছিল জজ মিয়া নাটক। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। যেমনি ক্ষমা করেনি
খালেদা-তারেক-নিজামীদের। ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো থেমে নেই। দেশ-বিদেশে
অপপ্রচারের মাধ্যমে বহুমূখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে ঘাতকরা। তারা দেশে
জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়ে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র
এখনো অব্যাহত রেখেছে। দেশের অগ্রগতিকে যারা মানতে চায় না। তারাই
গনমানুষের নেত্রীকে হত্যা করতে নানা মূখী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্য
বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউর দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ
এই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মী
নিহত এবং পাঁচ শতাধিকেরও বেশি নেতাকর্মী আহত হন। এই নারকীয় বীভৎস্য
হামলার ঘটনার ১৮ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে আজ।
আজকের এই দিনের বোমা হামলায় বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিলেও একটুও অবস্থান
পরিবর্তন করেনি তৎকালিন ৪ দলীয় জোট সরকার। স্বয়ং রাষ্ট্রযন্ত্রকে তারা
ব্যবহার করে ঘটনাকে ভিন্ন পথে নেওয়ার চেষ্টায় মত্ত ছিলেন তৎকালীন সরকার।
হামলাকারীদের রক্ষা করতে সাজানো হয়েছিল জজ মিয়া নাটক। তাকে তৎকালিন সরকার
মাসিক বেতনে লোভ দেখিয়ে ঘটনার সাথে জাড়িত বলে স্বীকারোক্তি দিতে প্রলুব্ধ
করেছিলেন। পরবর্তীতে মিডিয়ার বদৌলতে বেরিয়ে আসে সেই জজ মিয়ার নাটক। জজ
মিয়ার সবকিছু অপকটে স্বীকার করেছেন সাংবাদিকদের সামনে। বিভিন্ন গোয়েন্দা
সংস্থার লোকজন তাকে মাসিক বেতনের টাকা বাড়িতে দিয়ে আসতেন বলেও স্বীকার
করেছেন।
৭৫ এর ১৫ আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর
ওই হত্যাকান্ডের বিচার করা যাবে না বলে একটি অডিন্যান্স জারি করেছিল
ঘাতকরা। (যা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বলে পরিচিত) ওই কালো অধ্যাদেশের মাধ্যমে
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার করা যায়নি প্রায়
২২ বছর। পরবর্তীতে ১৯৯৬
সালে আওয়ামী লীগে রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় আসীন হলে জাতীয় সংসদে ওই আইন রহিত
করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইতোমধ্যে ফাঁসির
দন্ডপ্রাপ্ত ৭ জন আসামীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে। যারা বঙ্গবন্ধুর
খুনীদের বাঁচাতে চেষ্টা করেছিল ওই একই চক্র ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট গ্রেনেড
হামলার সাথে জড়িত। তারা ৭৫ এর কায়দায় ২১ আগষ্টের হামলার বিচার বন্ধ করতে
সাজিয়েছিল জজ মিয়া নাটক। হামলাকারী মুফতি হান্নানসহ হাওয়া ভবন
সংশ্লিষ্টদের বাঁচাতে তৎকালীন সরকার বিগত সময়ের আইন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের
মত কালো আইন না করলেও জজ মিয়া নাটকের মাধ্যমে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে
ঘাতকদের বাচাঁতে। পরবর্তীতে ৯৬ সালে যেভাবে ইনডেমনিটি রহিত করণের
মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ঠিক তেমনি বিগত ৪
দলীয় জোট সরকারের বিদায়ের পরই ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার মূল রহস্য উম্মোচন
হয়ে যায়। ঘাকদের মূল উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের
শীর্ষনেতাদের হত্যা করে আওয়ামী লীগের নাম দেশের মাঠি থেকে মুছে দেওয়া। যা
সফল হয়নি।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মূলত ছিল ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির জনককে
হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা। এ দু'টি ঘটনার ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনায়
জড়িত ব্যক্তিদের পরিচয়, ঘটনা-উত্তর পরিস্থিতি এবং হত্যাকাল্ডের ফলে
সুবিধাভোগী বা প্রত্যাশিত সুবিধাভোগীদের পরিচয়ের ওপর নজর দিলে বোঝা যায়
১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্টের ষড়যন্ত্রকারী ও হত্যাকারীদের উদ্দেশ্যের মধ্যে
কোনো পার্থক্য ছিল না।
এছাড়াও দু'টি হত্যাকান্ডের ভেতরে মূল যোগসূত্র হচ্ছে, ১৯৭৫ সালে
বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় নেতাদের হত্যাকান্ডের নেপথ্য নায়কদের ভেতরে অন্যতম
প্রধান ছিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। তেমনই ২০০৪ সালে শেখ হাসিনাকে
হত্যাচেষ্টার নেপথ্য নায়কদের প্রধান ছিলেন তারই পুত্র তারেক রহমান।
এই দু'টি ঘটনার প্রেক্ষাপট, পরিস্থিতি ও কিলিং মিশনে সরাসরি নিয়োজিত
ব্যক্তিদের পরিচয় ভিন্ন হলেও আদর্শিক অবস্থান ছিল এক। সরকারের উচ্চ
পর্যায়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানের কারণে, ২১ আগস্টের কিলিং মিশনে অংশ
নেয়া হত্যাকারীরা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ও নির্ভীক ছিল।
যার কারণে তারা প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত পুলিশের উপস্থিতিতে ও হাজার
হাজার মানুষের ভেতরে ঢুকে প্রধান টার্গেট বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে
মিস করলেও একের পর এক গ্রেনেড ছুড়ে ব্যাপক হত্যাকান্ড ঘটিয়ে নিরাপদে চলে
যেতে সক্ষম হয়। এই দুই হত্যাকান্ডের মধ্যে পার্থক্য কেবল একটাই, ১৯৭৫
সালে ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য সফল হলেও ২০০৪ সালে তা হয়নি। কিন্তু ২১
আগস্টের দোসররা আজও সক্রিয়। জাতির জনকের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার মহান
ব্রত নিয়ে অগ্রসরমান তাঁর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এখনো
ষড়যন্ত্রকারীদের প্রধান লক্ষ্যবন্তু।