Advertisement


মাতারবাড়ি থেকে ছাগল বিক্রির টাকা নিয়ে ফেরার পথে অজ্ঞান পার্টির কবলে চকরিয়ার যুবক

মাতারবাড়িতে ছিনতাইয়ের পর যুবককে বস্তাবন্দি করে ফেলে গেল দুর্বৃত্তরা, শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার


ফুয়াদ মোহাম্মদ সবুজ।। মহেশখালীর মাতারবাড়িতে ছিনতাইয়ের পর মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন (২৮) নামের এক যুবককে বেধড়ক মারধর করে অচেতন অবস্থায় বস্তাবন্দি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সোমবার (৩ জুন) সন্ধ্যায় ইউনিয়নের নতুন বাজারের পশ্চিম পাশে হাজী আবদুল সালাম কমিউনিটি সেন্টারের পাশে এ ঘটনা ঘটে। বস্তার ভেতর থেকে আহত যুবকের গোঙানি শুনে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।

উদ্ধার হওয়া যুবক জানান- পশু (ছাগল) বিক্রির ৩২ হাজার টাকা, হাতঘড়ি ও স্মার্টফোন ছিনতাই করে তিন দুর্বৃত্ত তাঁকে গলা চেপে ধরে অজ্ঞান করে বস্তায় ভরে ফেলে যায়। তিনি ছিলেন শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায়।

আহত মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন জানান- মাগরিবের সময় তিনি ছাগল বিক্রির টাকা সংগ্রহ করতে মাতারবাড়ির সিকদার পাড়ায় যান। সেখানে ক্রেতার কাছ থেকে বাকিতে বিক্রি করা পশুর পাওনা টাকা নিয়ে সন্ধ্যায় নতুন বাজার হয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ পিছন দিক থেকে তিনজন মুখোশধারী যুবক তাঁর মুখের দিকে চেতনানাশক মলম ছিটিয়ে দেয়। মুহূর্তেই তিনি অর্ধ-বেহুশ হয়ে পড়লে এক ছিনতাইকারী গলা চেপে ধরে ও বাকিরা হাত-পা বেঁধে ফেলে বেধড়ক মারধর করে। পরে সম্পূর্ণ অজ্ঞান অবস্থায় তাঁকে একটি বস্তায় ঢুকিয়ে নির্জন স্থানে ফেলে রেখে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায় বলে তিনি জানান।

ঘটনার পরপরই এলাকাবাসী হাজী আবদুল সালাম কমিউনিটি সেন্টারের পাশে ফেলে রাখা একটি বস্তা থেকে শব্দ শুনতে পান। উৎসুক জনতা বস্তা খুলে দেখেন, একজন যুবক নিথর পড়ে আছেন, কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁর শ্বাস চলছে। পরে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে সঙ্গে সঙ্গে মাতারবাড়ি ডিজিটাল হাসপাতাল এন্ড ডায়াবেটিস সেন্টারে নিয়ে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁর জ্ঞান ফেরান। ছিনতাইয়ের খবর ছড়িয়ে পড়লে বাজারজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের দোকানদাররা জানান, সন্ধ্যার পর থেকে এলাকায় সন্দেহজনকভাবে কিছু যুবক ঘোরাফেরা করছিল, তবে কেউ আগেভাগে কিছু বুঝতে পারেননি।

জানা যায়, ছিনতাইয়ের শিকার মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন চকরিয়ার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের হেতালিয়া পাড়ার বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম জাফর আহমেদ। তবে গত চার মাস ধরে তিনি স্ত্রীসহ মহেশখালীর মাতারবাড়ি ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মিয়াজিপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করে আসছেন। জীবিকার তাগিদে তিনি মাতারবাড়িতেই অবস্থান করছেন তিনি। স্থানীয়ভাবে তিনি একজন সাদাসিধে ও নিরীহ যুবক হিসেবে পরিচিত। তাঁর ওপর এমন নির্মম হামলার ঘটনায় শ্বশুরবাড়ি ও প্রতিবেশীদের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হেলালকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হবে। তাঁর মাথা, বুক ও পিঠে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। চেতনানাশক প্রয়োগের ফলে কিছুক্ষণের জন্য তাঁর শ্বাসপ্রবাহ ব্যাহত হয়। তবে দ্রুত সেবা পাওয়ায় বড় ধরনের শারীরিক জটিলতা এড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। 

হেলাল উদ্দিনের শ্বশুর বাড়ির একজন সদস্য জানান, 'এ ঘটনা আমাদের সবাইকে হতবাক করেছে। ছিনতাইকারীরা যে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, তা কল্পনা করিনি। চিকিৎসা শেষে আমরা থানায় মামলা করব। স্থানীয়রা জানান, নতুন বাজার এলাকা ও আশপাশে রাতে পর্যাপ্ত আলো না থাকায় অপরাধীরা সহজেই গা ঢাকা দেয়। বাজারসংলগ্ন ফাঁকা জায়গাগুলো এখন অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। তাঁরা দ্রুত সিসিটিভি স্থাপন, রাতের টহল বাড়ানো এবং এলাকাকে নিরাপদ ঘোষণা করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র জানায়, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাগুলো দিনদিন বেড়ে চলেছে, যা প্রতিরোধে এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা দরকার। অনেকেই মনে করছেন, একে একে যদি এমন নিরীহ মানুষ ছিনতাইয়ের শিকার হয় এবং আইনি পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করা হয়, তবে সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হবে। সচেতন নাগরিকদের অনুরোধ- এমন ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হোক।