Advertisement


বড় মহেশখালীর ছুফি মেম্বারের নেতৃত্বে সোনাদিয়ায় বন নিধন, অভিযান



রকিয়ত উল্লাহ ও শেখ আব্দুল্লাহ।। প্রশাসনের সাম্প্রতিক বড় অভিযানের পরও কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপে সরকারের সংরক্ষিত প্যারাবন কেটে এবং সরকারি জমি দখল করে চিংড়িঘের তৈরির মহোৎসব চলছে। দ্বীপের পূর্ব পাড়ার বরইগাছতলা এলাকায় প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শ্রমিক লাগিয়ে নতুন করে বন ধ্বংস করা হচ্ছে। খবর পেয়ে শনিবার দুপুরে সোনাদিয়ায় ফের অভিযান চালায় বন বিভাগ। 

স্থানীয় নিভর্রযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বড় মহেশখালীর সাবেক ইউপি সদস্য মো. ছুফি, সোনাদিয়ার মো. হোসেন, আন্জু মিয়া, ছোট মিয়াসহ অন্তত ১৫–২০ জন চিহ্নিত ভূমিদস্যু এ কাজে সরাসরি জড়িত। তাদের নির্দেশে প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ জন শ্রমিক নিয়োজিত করে গাছ কেটে ফেলা হয়। পরে শুকিয়ে গেলে আগুন দিয়ে জমি ফাঁকা করা হয়। এরপর বাঁধ তুলে বিশাল চিংড়ি ঘের তৈরির কাজ চলে।

 নির্ভরযোগ্য সূত্র আরো জানিয়েছেন, বড় মহেশখালী ও কুতুবজোম থেকে আনার জন্য প্রায় ১০০ শ্রমিককে জনপ্রতি এক হাজার টাকা মজুরিতে ঠিক করা হয়েছে। এ শ্রমিকদের দিয়ে শনিবার সকাল থেকে প্যারাবন কাটা, বাঁধ নির্মাণ ও জ্বালানি ছিটিয়ে বন পুড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে চক্রটি। এ অবস্থায় খবর পেয়ে দুপুরেই সোনাদিয়ার ওই পয়েন্টে অভিযান চালায় বন বিভাগের। 

বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক আবুল কালাম আজাদ সব খবকে জানান- শনিবার সকাল থেকে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক সকাল থেকে প্যরাবন কাটার কাজ করছে বলে খবর পেয়ে বন বিভাগের মহেশখালী ও কক্সবাজারের বিভিন্ন ইউনিট ওই এলাকার অভিযান চালায়। এ সময় শ্রমিকরা পালিয়ে যায়। পরে পাশ্ববর্তী গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শ্রমিক পরিবারগুলোকে সতর্ক করা হয়। 

বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আয়ুব আলী সব খবরকে জানান- সোনাদিয়া ও আশাপাশের এলাকার কিছু ভূমিদস্যুকে সাথে নিয়ে বড় মহেশখালীর সাবেক মেম্বর মো. ছুফি ও তার ভাই মোহাম্মদ রশিদ বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে এ কাজ করছে। ইতোমধ্যে ৩ একরের মতো প্যারাবন গত দুইদিনে কাটা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মেম্বার মো. ছুফি এ কাজের সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন।

জানা গেছে, সম্প্রতি বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে তিনটি অবৈধ চিংড়ি ঘের ও অস্থায়ী স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিলেও মূল হোতাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগে অভিযানের অল্প সময় পরই প্রভাবশালীরা আবার বাঁধ সংস্কার ও প্যারাবন কেটে ঘের তৈরির কাজ শুরু করেছে। ফলে অভিযান কার্যত ফলপ্রসূ হয়নি।

পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন, প্যারাবন উজাড় হলে উপকূল সরাসরি ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাতের মুখে পড়বে। একই সঙ্গে বহু মাছ, কাঁকড়া, শামুক ও পাখির আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে, মাটির স্বাস্থ্যও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আইনজীবী সংগঠন 'বেলা' ইতোমধ্যে এ ঘটনায় লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে। তাদের দাবি, মহেশখালী ও সোনাদিয়ায় অন্তত দশ হাজার একরের বেশি প্যারাবন অবৈধভাবে দখল হয়ে গেছে। বহু মামলা হলেও দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বিচার হয়নি। স্থানীয়রা বলছেন, দখলদারদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া এই দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে না। তারা দ্রুত নতুন করে বন ধ্বংস করে তৈরি হওয়া চিংড়ি ঘের এলাকায় বন বিভাগের কঠোর অভিযান ও সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার দাবি করেছেন।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ হেদায়েত উল্যাহ্ সব খবরকে জানান- নতুন ভাবে বন উজাড় করে সরকারি ভূমি দখলের তথ্য জানার পর বন বিভাগ অভিযান পরিচালনা করেছে। আগামীতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সম্পাদনা: মাহবুব রোকন।