ফিদেল কাস্ত্রো কিউবান রাজনৈতিক নেতা ও সমাজতন্ত্রী বিপ্লবী। সেই ফিদেল
কাস্ত্রোকে নিয়ে এবার বই লিখলেন মহেশখালীর সন্তান কবি ও প্রাবন্ধিক জাহেদ
সরওয়ার। কিউবা বিপ্লবের প্রধান নেতা ফিদেল ফেব্রুয়ারি ১৯৫৯ থেকে ডিসেম্বর
১৯৭৬ পর্যন্ত কিউবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তিনি কিউবা কমিউনিস্ট দলের
প্রধান হিসেবে ১৯৬১ সালে দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত আছেন। তাঁর
শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাঁর দায়িত্ব ভাই রাউল কাস্ত্রোর কাছে অর্পণ
করেন। রাউল বর্তমানে কমিউনিস্ট পার্টির সহকারী প্রধান এবং মন্ত্রী পরিষদের
প্রধান হিসেবে আছেন। এর আগে তিনি ১৯৫৯-২০০৮ পর্যন্ত ফিদেলের মন্ত্রী সভায়
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে
পড়ার সময়, ফিদেল কাস্ত্রো তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। এরপর কিউবার
রাজনীতিতে একজন বিখ্যাত ব্যক্তিতে পরিণত হন।
তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়
প্রেসিডেন্ট ফালজেন্সিও বাতিস্তা এবং কিউবার উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
রাজনৈতিক প্রভাবের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী সমালোচনা নিবন্ধ লিখে। তিনি এ
ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন।
অবশেষে তিনি ১৯৫৩ সালে মনকাডা ব্যারাকে একটি ব্যর্থ আক্রমণ করেন, এবং তারপর
কারারুদ্ধ হন ও পরে ছাড়া পান। এরপর তিনি বাতিস্তার সরকার উৎখাতের জন্য
সংগঠিত হওয়ার জন্য মেক্সিকো যান। ফিরে এসে ১৯৫৬’র ডিসেম্বরে সরকার উৎখাতে
নামেন।
পরবর্তীকালে কাস্ত্রো কিউবান বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন
যা যুক্তরাষ্ট্রের মদদে চলা বাতিস্তার স্বৈরশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এর
কিছুদিন পরই পর কাস্ত্রো কিউবার প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৬৫ সালে তিনি কিউবা
কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান হন এবং কিউবাকে একদলীয় সমজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে
রূপ দেন। ১৯৭৬ সালে তিনি রাষ্ট্র ও মন্ত্রী পরিষদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে
দায়িত্ব নেন। তিনি কিউবার সর্বোচ্চ সামরিক পদেও আসীন হন। ১৯৫৫ সালের জুন
মাসে চে গুয়েভারার সাথে পরিচয় হয় এবং ।কাস্ত্রোর সাথে চে'র প্রথম
সাক্ষাতে দীর্ঘ আলাপচারিতা হয় । তারপর চে ফিদেল কাস্ত্রোর ২৬শে জুলাই
আন্দোলন দলের সদস্য হন। বিপ্লবের পরিকল্পনায় কাস্ত্রের প্রথম পদক্ষেপ ছিল
মেক্সিকো হতে কিউবায় আক্রমণ চালান। ১৯৫৬ সালের ২৫শে নভেম্বর তারা কিউবার
উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। পৌছানোর সাথে সাথেই বাতিস্তার সেনাবাহিনী
কর্তৃক আক্রন্ত হন। তার ৮২ জন সহচরী মারা যান অথবা কারাবন্দী হয়, মাত্র
২২জন এ যাত্রায় বেঁচে যায়। চে গুয়েভারা তার বইয়ে লিখেছিলেন সেটা ছিল
সেই রক্তক্ষয়ী মুখামুখি সংঘর্ষের সময় যখন তিনি তার চিকিত্সাসামগ্রীর সাথে
একজন কমরেডের ফেলে যাওয়া এক বাক্স গোলাবারুদ নিয়েছিলেন, যা তাকে পরিশেষে
চিকিত্সক থেকে বিপ্লবীতে পরিনত করে।
ফিদেল কাস্ত্রোকে বিভিন্ন
প্রতিযোগিতা, কূটনীতি এবং অধ্যবসায়ের কথা জানিয়ে ছিলেন চে। যুদ্ধচলাকালীন
চে বিদ্রোহী সেনাবাহিনীর অখন্ড অংশ হয়ে গিয়েছিলেন। ফিদেল কাস্ত্রো
গুয়েভারাকে গ্রেনেড তৈরির কারখানা, রুটি সেকানোর জন্য চুল্লি প্রস্তুত এবং
নিরক্ষর সঙ্গীদের লেখাপড়ার জন্য পাঠশালা তৈরির দায়িত্ব দেন। তাছাড়াও
একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, সামরিক প্রশিক্ষনের কর্মশালা আয়োজন এবং
তথ্য সরবরাহের জন্য পত্রিকা প্রচার করার দায়ীত্ব প্রদান করেন। বিখ্যাত
টাইম ম্যাগাজিন তিন বছর পর চে গুয়েভারাকে ’’কাস্ত্রোর মস্তিষ্ক’’’ বলে
আখ্যায়িত করেছিল। ২০০৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কিউবার
প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। কবি ও প্রাবন্ধিক জাহেদ সরওয়ারের
লেখা এই পুস্তকে কিংবদন্তি কাস্ত্রোর নানা দিক উঠে এসেছে।
দেশের
খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কথাপ্রকাশ এবার এটি সহ তার দুইটি গ্রন্থ
প্রকাশ করেছে। আগামী বই মেলায় গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ মিলে তার আরো ৩ টি বই
আসছে বলে মহেশখালীর সব খবর’কে জানিয়েছেন কবি জাহেদ সরওয়ার।