Advertisement


মহেশখালীতে হাত বাড়ালেই ইয়াবা!


এসএম রুবেল।
টেকনাফের পর ইয়াবার স্বর্গরাজ্য এখন মহেশখালী। পুরো মহেশখালীকে মরনঘাতী ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সেবনকারীরা গ্রাস করেছে। পূর্বে ইয়াবার এত ছড়াছড়ি না থাকলেও গত দু’বছর ধরে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে ইয়াবা ব্যবসায়ীর সংখ্যা। এর ভিতরে মহেশখালীতে ইয়াবার দুটি বড় বড় চালানও আটক হয়। তারপরেও ভাটা পড়েনি ইয়াবা ব্যবসায়। সচেতন মহল মনে করছেন- প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মহেশখালীতে বর্তমানে ইয়াবার জোয়ার বইছে। নাকের ডগায় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ঘুরাঘুরি করলেও তা আটক হচ্ছেনা অজ্ঞাত বা বিশেষ কোন কারণে৷

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২-৩ বছর আগে মহেশখালীতে ইয়াবা ট্যাবলেট দুর্লভ বস্তু ছিল। আইনশৃংখলা বাহিনীর শক্ত অবস্থান ও তৎকালীন থানা পুলিশের নিয়মিত অভিযান থাকায় দেদারসে ইয়াবা ব্যবসা চলেনি। সেসময় টেকনাফ থেকে ইয়াবার ছোট ছোট চালান আসতো এ দ্বীপে। বিশেষ করে তখল চরাঞ্চল গুলোতে ইয়াবা বেচাকেনার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতো। কিন্তু ইদানিং ইয়াবা ব্যবসার পরিমাণ অভাবনীয় হারে বেড়েছে। মূলত বার্মা থেকে ট্রলারে করে নিরাপদে ইয়াবার চালান মহেশখালীতে খালাস করে অন্যান্য জায়গায় সরবরাহ করা যায়, আর এটিকে প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, মহেশখালীর চরাঞ্চল এলাকা মহেশখালী পৌরসভার চরপাড়া, কুতুবজোম ইউনিয়নের চরপাড়া, তাজিয়াকাটা, ঘটিভাঙ্গা, বরদিয়া, হোয়ানকের মোহরাকাটা, কেরুনতলী, টাইমবাজার, ছোটমহেশখালীর মুদিরছড়া, জালিয়াপাড়া, মাতারবাড়ি, ধলঘাটায় নদীপথে ইয়াবা গুলো প্রবেশ করে। সেসব ইয়াবা পৌরসভা, বড়মহেশখালী, কালারমারছড়া, শাপলাপুরে ইয়াবা মজুদ রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়। ইয়াবা খালাসে পৌরসভা, বড়মহেশখালী, কুতুবজোম, কালারমারছড়া ও মাতারবাড়ির প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় শক্তিশালী সিন্ডিকেট প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। এতে ক্ষমতাসীন দলের কয়েক নেতাকর্মীও জড়িত বলে জানা যায়।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, মহেশখালী ঘাটে প্রশাসনের কার্যকর তৎপরতা না থাকায় রাতের অন্ধকারে টেকনাফ ও মায়ানমার থেকে যে কোন অবৈধ পণ্য নিয়ে ট্রলার ভীড়তে পারে। এই সুযোগে ঘাটের লোকজনের সাথে আতাত করে নিরাপদে ইয়াবার চালান লোড আনলোড করা হয়। এই ঘাটে প্রশাসনের নজরদারী বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

এদিকে মহেশখালী থানা সূত্রে জানা যায়, প্রদীপ কান্ডের পর মহেশখালী থানার পুরো পুলিশ টীম পরিবর্তন হয়ে নতুন টীম আসে। নতুন এই টীম যোগদানের পর তেমন কোন ইয়াবার চালান উদ্ধার হয়নি। তবে বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীকে আটক করে তারা। এরই মধ্যে সর্ববৃহৎ চালানটি উদ্ধার করা হয় গোরকঘাটা সিকদার পাড়ার যুদ্ধাপরাধী মামলার অন্যতম আসামী মাওলানা জাকারিয়ার পুত্র সালাহ উদ্দীনের পোড়া গাড়ির ভিতর থেকে ৬ লাখ ২০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। কিন্তু কোন আসামী গ্রেপ্তার নেই। মামলাটি তদন্তাধীন আছে বলে পুলিশ জানান।

কক্সবাজার জেলার দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ ইয়াবার চালানটি মহেশখালী থেকে উদ্ধারের পর ইয়াবা বিস্তারের ঘটনাটি সর্বত্র আলোচনায় আসে। জনমনে প্রশ্ন জাগে, এ দ্বীপে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের প্রশ্রয়দাতা কারা। তবে অনেকে মনে করছেন ইয়াবা ব্যবসার সাথে রাজনীতিবিদ ও অনেক জনপ্রতিনিধি সম্পৃক্ত রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, গত বছরের ৫মে ছোট মহেশখালীর ডেইলপাড়া থেকে দেড় লাখ পিছ ইয়াবা সহ দুজনকে আটক করা হয়েছিল। আটককৃত হলো মোহাম্মদপুরের মো. সোলাইমান মিয়ার ছেলে নুর মোহাম্মদ ও টেকনাফ সাবরাং-এর আইয়ুব আলীর ছেলে মো. করিম উল্লাহ। এ সময় পাচার কাজে ব্যবহৃত একটি পিকআপও জব্দ করা হয় (ঢাকামেট্টো-ম-১১-১২৯১)। এ ঘটনায় ওসমান মেম্বার সহ কয়েকজনের নামে মামলা হলেও কোন আসামী গ্রেপ্তার হয়নি। কালের পরিক্রমায় ঐ ঘটনাটি চাপা পড়ে যায়।

উগ্রবাদ ও সহিংসতা প্রতিরোধ প্রজেক্টের মহেশখালী ফোকাল পার্সন আজিজুল হক জানান, “মহেশখালীতে মাদকের ছড়াছড়ির কারণে পরিবার ও সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে এবং বেড়ে চলছে সহিংসতা। সমাজের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে মাদক নির্মূলের বিকল্প নেই।