বিশেষ সংবাদদাতা ও কাব্য সৌরভ।। একবছর আগে গ্রেফতার হয়ে কারাবাসে থাকা রিদোয়ান নামের এক ব্যক্তিকে আসামি করা হলো ডাকাতি ও পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ার মামলায়। এ বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় বেশ চাঞ্চ্যলের সৃষ্টি হয়েছে।
মামলাটির বাদি মহেশখালী থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রিয়াজ উদ্দিন। আর মামলাটি তদন্ত করছেন- পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মাতারবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের ইন-চার্জ (আইসি) ইমরান হোসেন।
তবে মামলার বাদি রিয়াজ উদ্দিন বলছেন- ঘটনার পর গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির বক্তব্য ও তথ্যের ভিত্তিতে মামলায় ওই ব্যক্তির নাম এসেছে।
সূত্র জানিয়েছে- গত ১৪ মে (মঙ্গলবার) আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টার দিকে মহেশখালীর মাতারবাড়ি-চালিয়াতলী সড়কে ডাকাতি ও টহলরত পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে একদল ডাকাত। এতে মনির আহমদ নামের টহলরত এক পুলিশ সদস্য আহত হয়। ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন জায়গা অভিযান চালায় পুলিশ।
ঘটনার দুইদিন পর ১৬ মে (বৃহস্পতিবার) ভোর ৪ টায় ইউনুছখালী নাসির উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে নজরুল ইসলাম ওরফে টাওয়ার নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তার স্বীকারোক্তি মতে মো. জুয়েল নামের অপর একজনকেও গ্রেফতার করা হয়। জুয়েল ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়ির ড্রাইভার।
নজরুল ইসলাম আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততা ও পুলিশের উপর গুলি চালোনোর কথা স্বিকার করেছেন।
এ ঘটনায় ১৬ মে মহেশখালী থানায় কর্মরত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রিয়াজ উদ্দিন বাদি হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে আরও চার-পাঁচজনের অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। মামলায় ৩ ও ১১ নম্বর ক্রমিকে রিদোয়ান নামের নামের দুই ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
এজাহার সূত্রে দেখা যায়- রিদোয়ান প্রকাশ কালা রিদোয়ান(৩৯), পিতা আজিজুল হক প্রকাশ জুলইক্যা- উত্তর ঝাপুয়া, কালারমার ছড়া- নাম-পরিচয়ের এই ব্যক্তিকে মামলায় ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
জানা গেছে- মি. আজিজুলের পুত্র এই রিদোয়ান ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না বা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার তার সুযোগ ছিলো না। কারণ তিনি বর্তমানে জেল হাজতে আছেন।
তার আইনজীবী ও পরিবারের সদস্য সূত্রে জানা গেছে- গত বছর (২০২৩ সাল) এর ৭ এপ্রিল ডাকাতি ও অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার হয়। গ্রেফতাররের পর অন্য মামলায়ও তাকে স্যোন এরেস্ট দেখানো হয়। এ সব মামলায় তিনি করাবাস করেন এবং একটি মামলায় এখনও কারাগারে আছেন। চকরিয়ায় ডাকাতির প্রস্তুতির ঘটনায় একটি মামলায় সে সময় পুলিশ তাতে গ্রেফতার করেছিলেন, পরে তার কাছ থেকে পুলিশ অবৈধ বন্দুক উদ্ধার করেছিলেন। ডাকাতি প্রস্তুতির মামলায় তিনি আদালত থেকে জামিন পেলেও একাধিকবার জামিন আবেদন করে ব্যর্থ হয়ে বন্দুক উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে করা মামলায় তিনি এখনও কারাবাস করছেন।
সেই রিদুয়ান এর পরিবারের সদস্য ও তার ভাই রিয়াদ এর সাথে কথা বলে জানা গেছে- রিদুয়ান গতবছর গ্রেফতার হয়ে বর্তমান অব্দি কারাগারে আছেন। তাকে বিভিন্ন সময় ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফাঁসানোর মতো মাতারবাড়ি সড়কে ডাকাতি মামলায়ও আসামি করা হয়েছে- দাবি তার ভাই এর।
এখনও পর্যন্ত রিদোয়ান জেল হাজতে আছে বলে নিশ্চিত করেছেন তার আইনজীবী এডভোকেট শাহেদ মোহাম্মদ ইয়াছিন। তিনি জানান- মো. রিদোয়ান, পিতা: আজিজুল হক (প্রকাশ জুলুইক্যা) ২০২৩ সালের ৭ এপ্রিল রাতে চালিয়াতলী থেকে ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার হয়। পরে তার কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে মর্মে অস্ত্র আইনে মামলাসহ দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। সে সময় থেকে এখনো পর্যন্ত রিদোয়ান জেল হাজতে রয়েছে। জেলে থাকা একজন আসামি কিভাবে ডাকাতি ও পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ার ঘটনায় জড়িত হয়- তা আমার বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন এই আইনজীবী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলাটির বাদি মহেশখালী থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রিয়াজ উদ্দিন জানান- ঘটনার পর এই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির বক্তব্য ও তথ্যের ভিত্তিতে মামলায় ওই ব্যক্তির নাম এসেছে। ঘটনার সাথে ওই ব্যক্তি যুক্ত না থাকলে মামলার আইও (তদন্ত কর্মকর্তা) তার নাম বাদ দিবেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাতারবাড়ি পুলিশ ক্যাম্প এর ইন-চার্জ এর দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইমরান হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি সব খবরকে বলেন- থানায় রেকর্ড হওয়ার পর মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বাদি হয়তো মামলায় আসামিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এটা বাদির বিষয়, আমাকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে- তদন্তে কোনো ব্যক্তি জেলে থাকলে বা মৃত থাকলে বা সম্পৃক্ত নাই বলে নিশ্চিত হলে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ঘটনার সাথে যারা সম্পৃক্ত নেই তাদের নাম অবশ্যই বাদ দেওয়া হবে।
মহেশখালী থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী জানান- মাতারবাড়ি সড়কে ডাকাতি ও পুলিশকে গুলি করার ঘটনায় নজরুলসহ দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১৬৪ ধারায় তাদের স্বীকারোক্তি মতে জড়িতদের এজাহারভুক্ত করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন, তবে ঘটনায় জড়িত নয় এমন কেউ আসামি হলে তদন্ত করে পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে।