Advertisement


মহেশখালীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দায়সারা পুলিশ


এ.কে রিফাত, কন্ট্রিবিউটর ।। মহেশখালী উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। উপজেলাজুড়ে দিনের পর দিন বিভিন্ন জায়গায় দিবালোকে চলছে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও একাধিক অস্ত্র ও হত্যা মামলার আসামী কর্তৃক অবৈধ অস্ত্রের মহড়া। বিরাজমান রয়েছে জনমনে আতংক। উপজেলাজুড়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার ঝড় চলছে। জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে ওসির দায়সারা বক্তব্যে।


সম্প্রতি চিংড়ি ঘের দখল করতে গিয়ে উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়নের বাসিন্দা চিংড়ি এরশাদ উল্লাহ,  জুবায়ের বাহিনীর তুফান ও চিহ্নিত ডাকাত নাজেম উদ্দীনের নেতৃত্বে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ দিন দুপুরেই অবৈধ অস্ত্র হাতে মহড়া দেয়, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ স্থানীয় ও জাতীয় পত্র পত্রিকাসহ টেলিভিশনেও প্রচার হয়েছে।

সেদিনকার মহড়ায় অংশ নেওয়া অনেকেই প্রশাসনের কাছে চিহ্নিত হলেও তাদের মধ্যে এখনো কোন ব্যাক্তিকে আটক করতে বা তাদের ব্যাবহৃত অবৈধ অস্ত্রগুলো উদ্ধার করতে পারেনি থানা পুলিশ। সচেতন মহলেত অভিমত- অস্ত্র মহড়ার পর পুলিশের এমন নীরবতাকে কাজে লাগাচ্ছে চিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্টীগুলো।

গত ২৯ মে দিবাগত রাতে কুতুবজোমের চিহ্নিত মাদক কারবারী ও একাধিক অস্ত্র মামলার আসামি গোলাপ শাহ প্রকাশ্যে খোলা আকাশে গুলি ছুঁড়ে প্রতিপক্ষকে নিজের অবস্থান জানান দেয়। কিছুক্ষণ পরে একই ইউনিয়নের চিহ্নিত মাদক কারবারী ও একাধিক অস্ত্র মামলার আসামি হেলাল প্রকাশ্যে খোলা আকাশে গুলি ছুড়ে নিজের অবস্থানের জানান দেন প্রতিপক্ষ গোলাপ শাহকে।

বিষয়টি থানা পুলিশের কাছে জানাজানি হলে একই রাতে মহেশখালী থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক এস আই আসাদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল যে, পুলিশ গিয়ে দুজনের মধ্যে একজনকেও আটক না করে এবং উভয়ের অবৈধ অস্ত্রগুলো উদ্ধার না করেই ফিরে আসে থানায়।

পুলিশের এমন দায়য়সারা অভিযানকে ঘিরে স্থানীয় সচেতন মহলের ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। এখনো সেদিনকার গোলাপ শাহ ও হেলালের ব্যাবহৃত অবৈধ অস্ত্রগুলো উদ্ধার করতে পুলিশ সম্পুর্ণভাবেই ব্যর্থ বলে জানা যায়।

তাছাড়াও মহেশখালীতে চিংড়ি ঘের দখল বেদখল নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন জায়গাতে প্রকাশ্যে ভিন্ন ভিন্ন পক্ষ অবৈধ অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে দিবালোকে একাধিকবার অবৈধ অস্ত্রের মহড়া দিয়ে আসছে। এতে করে যে কোনো সময় হয়ে যেতে পারে প্রতিপক্ষের সাথে বন্দুকযুদ্ধ। বেশ কয়েকটি জায়গাতে হয়েছে ঠিক এমনটাই।

যার প্রমান হিসেবে চলতি বছরের মার্চ মাসে কুতুবজোমের সোনাদিয়াতে চিংড়ি ঘের দখল করতে গিয়ে দু-পক্ষের মধ্যে চলে দিনব্যাপী বন্ধুকযুদ্ধ। এতে গুলিবিদ্ধ হয় উভয়পক্ষের একাধিক লোকজন। আহতদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দু-পক্ষের দুজন লোক মারা যায়। যার মধ্যে সোনাদিয়ার বাসিন্দা সাদ্দাম ও বড় মহেশখালীর জাগিরাঘোনা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাইফুল নামের দুই লবণ শ্রমিক।

মাসখানেক আগে যেমনটা হয়েছিল সোনাদিয়াতে।যেখানে কিনা দু-পক্ষের দুইজন ব্যাক্তি নিহত হয়েছিল। আশ্বর্যের বিষয় হল যে- ঘটনার বেশ কয়েদিন পরে -সেসময়ে এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে যে মামলাগুলো হয়েছে তা অনেকটা দায়সারা। বড় মহেশখালীর বড় দুই নেপথ্য নায়কই মামলার বাইরে রেখে অনেকটা সমঝোতার ভিত্তিতে মামলাগুলো হয়।

এরপরে চলতি বছরের মে মাসে বড় মহেশখালীর বড় ডেইল, ফকিরাকাটা ও পানিরছড়ার পশ্চিমে চিংড়ি প্রজেক্টে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া চালায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্টী। সে সময়েও থানা পুলিশ কোন অস্ত্রধারীকে আটক করতে পারেনি। যার কারনে অবৈধ অস্ত্রের মহড়া দেওয়ার তিনদিনের মাথায় ৪ মে স্থানীয় দু-পক্ষের মধ্যে শুরু হয় হয় বন্দুকযুদ্ধ- যা দফায় দফায় চলমান থাকে দুই তিনদিন ধরে।

চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের মধ্যে শুরু হওয়া বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হন উভয়পক্ষের একাধিক ব্যাক্তি। সেখান থেকে ৬ মে চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফকিরাকাটার বাসিন্দা ওসমান নামের একজন লবণ মাঠের শ্রমিক।

এ নিয়ে মহেশখালী থানায় একাধিক ব্যাক্তিকে আসামী করে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়। মামলা রেকর্ড হওয়ার ২৫ দিন পার হলেও এখনো সেই মামলার মুল আসামীরা ধরা ছোয়ার বাইরেই রয়েছে বলে জানান মামলার বাদীপক্ষের লোকজন।

হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হওয়ার সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সম্পুর্ণ ব্যর্থ হয় মহেশখালী থানা পুলিশ। যার কারনে পরও দু-পক্ষের মধ্যে চলে একাধিকবার ধাওয়া পালটা ধাওয়াসহ গোলাগুলি ও উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। যা নিয়ে মহেশখালী থানায় নতুন করে আরো একটি মামলা রুজু করেন সে সময়কার আহত ব্যাক্তিদের পরিবার।

দুই গ্রুপের অস্ত্রধারীরা চিহ্নিত হলেও এখনো তারা অধরাই রয়ে গেলো। তাছাড়াও উদ্ধার হয়নি হত্যাকাণ্ডে ব্যাবহৃত অবৈধ অস্ত্রগুলো।
যা নিয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সচেতন মহল।

একই ভাবে ওই এলাকায় কিশোর গ্যাং এর অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায়। সেই কিশোর গ্যাংও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে।

এ সবের বাইরেও মহেশখালীতে মাদকের আগ্রাসন, আনলাইন জুয়ার হাট বসে। প্রতিনিয়তই ঘটছে হানাহানি ও এলাকায় এলাকায় আইনশৃঙ্খলা অবনতির ঘটনা। পুলিশের অনেক লোকজনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও শোনা যায়। অবৈধ ভাবে সরকারি জমি দখল ও প্যারাবন নিধনচক্রের সাথেও পুলিশের যোগসূত্রতার অভিযোগ রয়েছে।

এসব বিষয়ে মহেশখালী থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান- বড় মহেশখালীর ওসমান হত্যাকাণ্ডের তিনজন আসামি ইতোমধ্যে আটক করেছে পুলিশ। কুতুবজোমে প্রকাশ্যে গুলি ছোঁড়ার বিষয়ে কাছে তেমন কোন তথ্য আসেনি। ধলঘাটায় প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেওয়ার বিষয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। তবে ভিন্ন ভিন্ন জায়গাতে প্রকাশ্যে ব্যাবহৃত অবৈধ অস্ত্রগুলো উদ্ধারের বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি ওসি।